ঢাকা
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:১৭
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

রাঙ্গুনিয়ার জুটমিলে পাট সংকটে কাজ মিলছে না শ্রমিকদের, কর্মহীন ৫'শ শ্রমিক

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বেসরকারি খাতে ইউনিটেক্স গ্রুপের কাছে লিজ দেয়ার পর উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিল। তবে সরকার পতনের পর ব্যাংক থেকে নগদ টাকা সংকট এবং বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে পাট আনতে না পারায় ধুকে ধুকে চলছে মিলটি। তিন শিফটে উৎপাদন হওয়া মিলটিতে এখন মাত্র চালু আছে এক শিফট। দৈনিক ১৮ টন সুতা উৎপাদন থেকে কমে এখন হচ্ছে মাত্র ৩ টন। ইতিমধ্যেই ছাটাই করা হয়েছে ৫০০ শ্রমিক। যেসব স্থানীয় শ্রমিক এখনো রয়েছেন তারাও পাট সংকটে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছেন না। এতে চরম বেকায়দায় দিন কাটছে শ্রমিকদের। অন্যদিকে এই সংকটে ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়া মিল কর্তৃপক্ষ সরকারকে মাসে ২২ লাখ টাকা ভাড়াচুক্তি থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করার আবেদন করেছেন।

জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানটি ইউনিটেক্স গ্রুপ লিজ পাওয়ার পর সুতা উৎপাদনের পাশাপাশি কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলো। মিলে তিন শিফটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিলো ৭—৮’শ শ্রমিকের, উৎপাদন হতো দৈনিক ১৮—৩০ টন সুতা। উৎপাদিত সুতা রপ্তানি হতো বিশ্বের ১২টি দেশে, যেখান থেকে আসতো কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার কারণে পাটের ঘাটতি আর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে সমস্যার কারণে উৎপাদনে ধস নেমেছে মিলটিতে। তিন শিফটে উৎপাদন হওয়া মিলটিতে বর্তমানে কোনরকম এক শিপট চালু রয়েছে। অনেকে মিল বন্ধ হওয়ার গুজবও তুলে। তবে শীঘ্রই মিলটি ঘুরে দাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করেছেন।

সরেজমিনে গেলে জানা যায়, মিলটি বর্তমানে কোনরকম এক শিফট চালু রয়েছে। যেখানে বর্তমানে স্থানীয় ৭০—৮০ জন শ্রমিক দৈনিক কর্মরত রয়েছে। এক মাস আগেও উৎপাদনের জন্য যেখানে মিলের স্প্রিংনিং মেশিং চলতো ২২টা, সেখানে চলছে মাত্র ৬টি। ড্রয়িং মেশিন ১৮টির মধ্যে চলে ৩টি। বেচিং মেশিন চলে ৩টা, ফাইভেনার চলছে ৫টি। মিলে পূর্বের কেনা ১২০ টন মতো পাট মজুদ আছে। এসব দিয়ে এভাবে আগামী এক মাস মিল চালু রাখা যাবে। অন্যদিকে দেশের অস্থিরতার কারণে বিদেশেও উৎপাদিত সুতা রপ্তানি করা যাচ্ছে না। পূর্বের অর্ডারও সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রেতারা বাতিল করে দিচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে কিছু সংখ্যক উৎপাদিত সুতা রপ্তানী করে কোনরকম সচল রয়েছে মিলটি।

নাজমা আক্তার নামে এক নারী শ্রমিক জানান, “গত তিন বছর ধরে মিলে কর্মরত রয়েছি। আমরা সব মিলিয়ে ৭০—৮০ জন মতো শ্রমিক রয়েছি। দৈনিক এক শিফট উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন সবাই কাজ পায় না। আমি গত সপ্তাহ কাজ পেয়েছি মাত্র ৩ দিন, এই সপ্তাহে ২দিন। দিনে ২৮০টাকা করে পাঁচ দিনের টাকা দিয়ে নিজে চলবো, নাকি সংসার চালাবো। মিলে কর্মরত সব শ্রমিকরা এই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে।”

দিলু আক্তার নামে একজন জানান, এই মিলটি নতুন উদ্যোমে চালু হওয়ার পর বাইরের শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকর কাজের জোগান দিয়েছে। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি ওভারটাইম, হাজিরা বোনাসসহ নানা সুবিধা নিয়ে সুন্দরভাবেই সংসার চলছিলো। কিন্তু তিন শিফট থেকে উৎপাদন এক শিপটে চলে আসায় কাজ মিলছে না।
লাখি আক্তার নামে একজন জানান, সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন কাজ পায়। অনেকসময় গাড়িভাড়া খরচ করে এসেও কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। সপ্তাহে ৫—৬'শ টাকা পাওয়া যায়। এসব দিয়ে সংসার চলছে না বলে তিনি জানান।

জোৎস্না আক্তার নামে একজন বলেন, এখন মিলে চাকুরী করে আর পোষাচ্ছে না। তারপরও পেটের দায়ে থাকছেন। স্বামী নাই। একটা ছেল নিয়ে কষ্টে আছেন। মিলটি পুরোদমে চালু করা গেলে স্থানীয় শ্রমিকরা কোনভাবে সংসার নিয়ে বাঁচবেন।

মিলের প্রশাসন সুত্র জানায়, ২০২২ সালে লিজ পাওয়ার পর ইউনিটেক্স গ্রুপ মিলের মেশিনগুলো সংস্কার করে। এরপর বিদেশ থেকে নতুন মেশিন আনার চেষ্টায় ১০ মাস অপেক্ষা করেও এলসি বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে মিলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। প্রচুর 'র' ম্যাটেরিয়ালস পুড়ে যায়। যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চলে যায় আরও ছয় মাস। এরমধ্যে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ সীতাকুণ্ডের একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল থেকে কিছু বস্তা বানানোর মেশিন আনার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আবেদন করে এক বছর অপেক্ষা করেও সেগুলোও আর পাওয়া যায়নি। এদিকে মেশিনগুলো পাওয়ার আশ্বাসে মিলে বাইরের থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। তাদের জন্য ৩০টি পরিবার থাকার উপযোগী কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়, মেরামত করা হয় পরিত্যক্তগুলো। আরও ২৫টি নির্মাণ করার জন্য মালামাল আনা হয়। মিলে আনা শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন, খাবার, রমজানে ইফতার, ঈদে কাপড়, কোরবানে মাংসসহ নানা সুবিধা দিয়ে মেশিন না পাওয়ায় দুই বছরের বেতন—বোনাস দিয়ে তাদের ফেরত পাঠাতে হয়েছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয় মিল কতৃপক্ষের। পাটের দাম মন প্রতি ২২'শ টাকা থেকে বেড়ে হয়ে যায় ৩৬'শ টাকা। পরে মিলে মজুদকৃত পাট দিয়ে দশ মাস চালানো হয়। এরমধ্যে দেশের এই অবস্থার চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে মিলটিকে। ফলে শুরু থেকে বিভিন্ন মেশিন ক্রয়, পুরাতন মেশিন সংস্কার, রাস্তাঘাট সংস্কার, শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা করাসহ প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলে মিল কর্তৃপক্ষ। এখন ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকা মিলটি ঠিকিয়ে রাখতে মিলের মাসিক ভাড়ার চুক্তি ২২ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করার আবেদন করা হয়।

ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কৃষকদের থেকে পাট কেনা যাচ্ছে না। তার উপর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে না পারায় নগদ টাকার অভাবও রয়েছে। তারপরও ক্রমাগত লোকসান দিয়ে হলেও মিল চালু রেখেছি। সরকারি সহায়তায় শীঘ্রই এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশা করি।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram