গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে এ মামলা দায়ের করেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. মোস্তফা কামাল।
মামলার বাদী বিদ্যালয়ের নবযোগদানকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম ও বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষক যাতে না করিতে পারে এ জন্য নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিজ্ঞ আদালত ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদান করেন।
শোকজ নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আমি ও বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক (সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মো. হাবিবুর রহমান নোটিশ পেয়েছি। অন্যদের বিষয়ে জানা নেই।
মামলায় আসামী করা হয়েছে গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদ, আব্দুস সাত্তার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে এ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামছুজ্জামান দুর্জয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রথমে নিয়োগের তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে সরিয়ে তার অধিনস্ত কর্মকর্তা একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায়কে কে তদন্তভার দেয়ায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম খান শহিদ বলেন, যে নিয়োগ বোর্ডে তার উধ্বর্তন কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানে সুষ্ঠ তদন্ত বিঘ্নিত হওয়ার শংকা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায় বলেন, আমি শুধু প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করছি, নিয়োগ বোর্ডের কারা ছিলেন, তাদের নিয়ে তো আর তদন্ত হচ্ছে না। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২ আগস্ট সারাদেশে উত্তাল ও শত শত শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির দিনে নিয়োগ পরীক্ষা ও ৫ আগস্ট সারাদেশে সাধারণ ছুটির দিনে এ অবৈধ নিয়োগ বৈধ্যতা দিতে রেজুলেশান সৃজনের ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৌরীপুরে ৩জন নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বৈধ করতে বিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই একটি ফাঁকা ওয়েবসাইট করেন এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান। তিনি ওই ওয়েবসাইটে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের কোনো তথ্য আপলোড করেন নাই। শুধুমাত্র ‘একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।’ তবে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েবসাইট ও নোটিশ বোর্ডে প্রদান করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, দ্রুত নিয়োগ দেয়া নিয়ে কমিটির চাপে ছিলাম। তাই ২আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতিতেও নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হয়েছে। ওয়েবসাইট ছাড়া নিয়োগ নেয়া সম্ভব না। তাই তাড়াহুড়া অবস্থায় করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষার তারিখ, লিখিত পরীক্ষার বা চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত ফলাফল বোর্ডে ও ওয়েবসাইটে দিতে হবে, সেটা আমার জানা ছিলো না।