ঢাকা
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:৪৩
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০২৪

নড়াইলে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন

হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে নানা আয়োজনে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দিবসটি পালনে এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচীর আয়োজন করে।

শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীর এ দিন সকালে নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে শিল্পীর বাসভবনে তথা এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা ও শিশুস্বর্গে কোরান খানি ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর শিল্পীর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন’র সভাপতি ও জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, সুলতানের শিষ্য চিত্রশিল্পী প্রফেসর বিমানেশ বিশ্বাস,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আরাফাত হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস, এনপিপি’র জেলা সভাপতি শরীফ মুনির হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ আবু হানিফ প্রমুখ।

১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। জন্মভূমি নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে তাকে শায়িত করা হয়। এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন। সুযোগ পেলেই ছবি আঁকতেন শিশু সুলতান। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা।

পড়ালেখা ছেড়ে ১৯৩৮ সালে চলে যান ভারতের কলকাতায়। চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার (সুলতান) পরিচয় হয়। অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করেন। ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সাথে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান। ১৯৪৫ মতান্তরে ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকা যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথপ্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এসএম সুলতানের ছবি স্থান পায়।

১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইনাম আহম্মদ চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এসএম সুলতান। এদিকে, সুলতান তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন। সুলতান তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষের বাস্তব জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সংগ্রামী জীবনের কথাই বেশি চিত্রিত করেছেন। তাঁর পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপনের ছবি সত্যিই মনমুগ্ধকর।

শিল্পীএসএম সুলতান চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতে পটু ছিলেন। সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন। তাঁর পোষা বণ্যপশু পাখিরা তাঁর বাশির সুরের রীতিমত দোল খেত। সুলতানশিষ্য চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী বলেন, সুলতান হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একজন নির্লোভ মানুষ।

শিল্পী সুলতানের অন্যতম ঘনিষ্ট শিষ্য খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী প্রফেসর বিমানেশ বিশ্বাস বলেন, শিল্পী সুলতানের জীবনদর্শন ছিল একেবারে ভিন্ন। তিনি কোন সঞ্চয় করতেন না। নিজের খাবারের কথা ভাবতেন না। নিজের পোষা পশু পাখির খাবার জোটার জন্য তিনি অনেক সময় বিচলিত হয়েছেন। তিনি নিজের সুখ শান্তির জন্য কোন দিন বিন্দুমাত্র ভাবেননি। তবে সাধারণ মানুষের ভলো থাকা ও সুখ সমৃদ্ধি নিয়ে অনেক চিত্রকর্ম করেছেন। তিনি ছবির মাধ্যমে মনের অভিবক্তি প্রকাশ করতেন।

চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে প্রিয়জন্মভূমিতে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram