এস এম আকাশ, ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা এলপিজি বহনকারী লাইটারেজ জাহাজে গত ১৩ দিনে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে নোঙর করা এলপিজি বহনকারী লাইটারেজ জাহাজ ‘সুফিয়া’য় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
বাংলাদেশ শিপিং কপোরেশন (বিএসসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক গত দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর মন্তব্য করেছিলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে এই নাশকতা।
কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, কয়েকদিন আগে ৩০ সেপ্টেম্বর বিএসসির আরেকটি জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’তে আগুন লেগেছিল। চারদিন পর আগুন লাগলো বাংলার সৌরভে। তাই আমরা ধারণা করছি, এই ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলার অপচেষ্টা। এই ঘটনায় কারা জড়িত তা শনাক্ত করা উচিত।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ‘বাংলার জ্যোতি’ নামে একটি তেলবাহী জাহাজে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজনের মৃত্যু হয়। এর আগে ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার সৌরভে’ আগুনের ঘটনা ঘটে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে নোঙর করা এলপিজি বহনকারী লাইটারেজ জাহাজ ‘সুফিয়া’য় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল রোববার (১৩ অক্টোবর) ভোরে পর্যন্ত ওই জাহাজে থাকা ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গভীর সাগরে নোঙর করা জাহাজে আগুন লাগার বিষয়টি সঠিক। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের (চট্টগ্রাম) ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কোস্টগার্ড টাগশিপ, তিনটি মেটাল শার্ক অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার তৎপরতায় রয়েছে কোস্টগার্ড।
নৌপুলিশের ওসি মো.একরামুল হক বলেন, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখছি। কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকির বলেন, গভীর সাগরে নোঙর করা ওই জাহাজে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখা যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ,একটি টাগবোট ও চারটি স্পিডবোট উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পোর্টের অগ্নিনির্বাপক দলসমূহ যৌথভাবে কাজ করছে। রোববার ভোর পর্যন্ত ওই জাহাজে থাকা ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
এর আগে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ক্রুড অয়েল বহনকারী বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরপর পৃথক দুটি ঘটনায় বিএসসি নাশকতার আশঙ্কা করছিল। ১২ দিনের ব্যবধানে তিনটি দেশীয় জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক বলে মত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করা আতিক ইউ খানের। তিনি বলেন, গত ৩০ বছরে এমন কিছু দেখিনি। রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে এ কথা জানান আতিক ইউ খান।
পোস্টে তিনি বলেন, ২৫ বছর বিদেশি জাহাজে ছিলাম। খুবই উঁচুমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল এবং সেভাবে মেইনটেইন করা হতো। দেশীয় জাহাজে ১২ দিনের মধ্যে পরপর তিনটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ড আর বিস্ফোরণ নিঃসন্দেহে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা।
এর আগে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ‘বাংলার জ্যোতি’ নামে একটি তেলবাহী জাহাজে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, বছরে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের ১২-১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিবহন করে বিএসসি। বড় জাহাজে বিদেশ থেকে এইসব তেল আমদানি করে বহির্নোঙরে আনা হয়। এরপর সাগরে বিএসসি’র ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভে’র সাহায্যে লাইটারিং করে কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরবরাহ করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি সেই তেল পরিশোধন করে।