নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাক হেডম্যান পাড়া, জারুলিয়াছড়ি, কম্বনিয়া, চাকঢালা, আশারতলী ও জামছড়ি এলাকার নাইক্ষ্যংছড়ি খাল থেকে বালি উত্তোলন করছে দেদারসে। সীমান্ত ইউনিয়ন ঘুমধুমের বাইশফাড়ী, তুমব্রু এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা ও লামা উপজেলার ফাসিঁয়াখালী ইউনিয়নের লামার পাড়ার মাঝখানে দুই উপজেলার সীমানায় খুটাখালীর ছড়াখাল। ঐ ছড়াখাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। বালু খেকোরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত প্রকাশ্যে অবাধে বালু উত্তোলন করে পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে বাঁধ, ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।
অপরদিকে ঐ ছড়া খালে বালি খেকোরা মাঠির বাঁধ দিয়ে খালের গতি পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ির বিশাল একটি অংশ লামা উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানচিত্র। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা গ্রামের জুহুরা পারভীন, কামাল হোসন, আব্দু শুক্কুর, আমির মোহাম্মদ বাদি হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক ভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি বলে সাংবাদিকদের জানান। তাই তারা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লামার পাড়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শফিউল আলম পুতুসহ তারা ৫ ভাই মিলে খুটাখালী এলাকার ডাক্তার আজিজ এর নেতৃত্বে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কাগজি খোলা খুড়াখালী ছড়াখালের কয়েকটি স্থানে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলছে। শুধু তাই নয়, নদীর তীর থেকে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে আশ-পাশের ইট ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছে এই সিন্ডিকেট। এতে নদীর তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানের পাড় ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যে কোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঐ এলাকার মোঃ ইউনুছ প্রকাশ কেড়া ইউনুছসহ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী মাটি ও বালু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ শর্তেও বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও তারা দিন-রাত ট্রাক ও ডাম্পার গাড়ী যোগে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়ি -ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিররুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। সম্প্রতি দুই একবার স্থানীয় কাগজি খোলা পুলিশ এই অবৈধ বালু উত্তোলনের মেশিন জব্দ করলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’এক বছরের মধ্যে নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে সচেতন মহল অভিযোগে জানান।
এ প্রসঙ্গে বালু উত্তোলনকারী শফিউল আলম পুতু জানান, নদী তীরবর্তী ব্যক্তির মালিকানাধীন জায়গা কিনে সেখান থেকে বালু ও মাটি বিক্রি করছেন তিনি। অপর বালু উত্তোলনকারীর হোতা ডাক্তার আজিজকে মুঠোফোনে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে স্থানীয়রা জানান, তারা ৪টি জায়গায় বোরিং করে বালু উত্তোলন করেন। বর্তমানে তা চলমান রয়েছে। দুই উপজেলার সীমান্তের এ ছড়াখালের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মেশিনে বালু উত্তোলন হচ্ছে। কারা, কিভাবে, কাকে ম্যানেজ করে এই বালু উত্তোলন করছে তা স্থানীয়দের জানা নেই। এছাড়া রামুর গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার ও নাইক্ষ্যংছড়ির একটি বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার আশারতলী, জামছড়ি, চাকঢালা, কম্বনিয়ার নাইক্ষ্যংছড়ি খাল থকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করছে। এবং ঝিরিও ছড়া এলাকা থেকে ডাম্পার গাড়ীতে শ্রমিক দিয়ে কোদাল দিয়ে গাড়িতে উত্তোলন করে বালি পাচার করছে আশপাশ এলাকা ও ইট ভাটা এবং বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ও অবকাঠামো নির্মাণস্থলে।
বাইশারী এলাকার ভোক্তভোগী শিক্ষক জসিম উদ্দন বলেন, ছোট এই খাল থেকে বালু উত্তোলনে, খাল গুলি ভেঙ্গে খালের পাড়ের বাসিন্দারা বসত বাড়ী নিয়ে হুমকিতে দিনযাপন করছেন। এই বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির আশারতলীর বাসিন্দা মো: উসমান বলেন, পাহাড় ও বন খেকোরা দিনে রাতে ড্রাম্পার, ট্রলি নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি খালের বালি ও পাহাড় কেটেঁ সাবাড় করছে। এই নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও পাহাড় কর্তনের ফলে খাল ও পাহাড়ের বাসিন্দারা হুমকিতে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাত জাহান ইতু বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এই বিষয়ে কিছু জানি না। খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
জাতিসংঘের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নদী-খাল থেকে বালি উত্তোলন পরিবেশ এবং জনজীবন হুমকিস্বরূপ। অতিরিক্ত মাত্রায় বালি উত্তোলন খাল ও নদীর জ্বল প্রবাহ কমিয়ে নদী ও খালের ক্ষয় বাড়িয়ে তোলছে। যার কারনে নদী ও খালের পাড় ভাঙা বৃদ্ধি পাচ্ছে।