গোলাম মাহবুব, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের নারীদের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিনা খরচে আইনী তথ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছেন ফ্রেন্ডশীপ নারী কর্মীরা। এতে চরাঞ্চলীয় নারীদের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে দুর্গম চরাঞ্চল সমুহে অনেকাংশে কমেছে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব। আস্তে আস্তে ওই পিছিয়ে পড়া এলাকা সমুহে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলো। প্রতিনিয়তই সেবা নিতে ছুটে আসেন স্থানীয় নারী-পুরুষেরা।
জানা গেছে, ২০১২সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ’র সুশাসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার তিন ইউনিয়নে চালু করা হয় ‘আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্র’। বর্তমানে ২০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এসব আইনী তথ্য সেবা প্রদান করে আসছে তারা। এর প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন করে নারী কর্মী নিয়োগ করা হয়। এদের একজন ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল (এফসিপি), অপরজন ফ্রেন্ডশীপ কমিউনিটি গভার্ন্যান্স এইড (এফসিজিএ)। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শ্রেণীর নারীদের আইনী তথ্য সেবা দিয়ে আসছেন। এফসিপি সরাসরি পরামর্শ দাতা এবং এফসিজিএ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে অ্যাওয়ারনেছ তৈরী করা। তাদের হিসাবে গত একমাসে তিন ইউনিয়ন মিলে অন্তত ২শ নারীকে আইনী তথ্য সেবা প্রদান করেছেন তারা।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ও চিলমারী ইউনিয়ন সমুহে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব আইনী সেবা পাচ্ছেন চরাঞ্চলের অসহায় নারী বাসিন্দারা। এতে ওই অঞ্চলে অনেকাংশে কমেছে অপরাধ। স্বাভাবিকভাবে ওই সব আইনী সেবা বা পরামর্শ নিতে যেতে হতো থানায়। নদ পাড়ি দিয়ে থানায় যেতে সময় লাগে কয়েকঘন্টা। ফলে দেখা যেতো অনেকেই এই সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিলেন।বর্তমানে সহজেই এসব সেবা পাচ্ছেন তিন চরের প্রায় ১৫ হাজার নারী।
নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ারচর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল (এফসিপি) রেহেনা আক্তার ও ফ্রেন্ডশীপ কমিউনিটি গভার্ন্যান্স এইড(এফসিজিএ) ইরিনা খাতুন নিরলসভাবে চরাঞ্চলের নারী দের আইনী তথ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। তারা জানান, ফ্রেন্ডশিপ সুশাসন প্রকল্পের আওতায় আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ১৭জন নারীকে আইনী তথ্য সেবামুলক পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা মোছা.মেহেরা বেগম বলেন, আমার বয়স হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা আমাকে ভরণ পোষণ দিচ্ছে না। পরে আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্রে এসে সহায়তা চাইলে আপারা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমার সন্তানদের কাছে গিয়ে কথা বলেন। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত আমার ভরণ-পোষণ দিচ্ছে এবং আমি খুব সুখে আছি। মোছা.নারী সুফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রায়ই আমাকে নির্যাতন করতেন। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে এখানে এসে কথা বললে, এখানকার আপারা গিয়ে আমার স্বামীকে বুঝিয়েছেন।আইনী প্রক্রিয়া কি কি হতে পারে। আমার স্বামী বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এখন পারিবারিক এই সমস্যাটা আর নেই। আমি এখন ভালো আছি।
ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল(এফসিপি) রেহানা আক্তার জানান, সপ্তাহের ৩-৪দিন বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান পেতে নারীরা আমাদের কাছে আসেন। তাদের সমস্যাগুলো শুনে এর আইনী কি কি পদক্ষেপ রয়েছে, সেগুলো তাদের জানিয়ে দেই। এছাড়াও আমরা অভিযোগগুলো নিয়ে বা সহায়তা দেয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত আইনী সেবাসহ সবধরণের সেবা পেয়েছেন ১৭জন নারী।
ফ্রেন্ডশিপের সুশাসন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো.আব্দুল মান্নান জানান, ফ্রেন্ডশীপ কমিউনিটি প্যারালি গ্যালের কর্মীগণ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সভায় অংশ গ্রহণ করেন। চরাঞ্চলের ২০টি আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ নিস্পত্তি করা হয়ে থাকে। ফলে দিন দিন চরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই আইনী তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলো। স্থানীয়ভাবে যে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হয়না সেগুলো জেলা লিগ্যাল এইডে পাঠানো হয়।