মোঃ তানফিজুর রহমান, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড়ে কাউন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ নিলে এক দিকে যেমন শত শত কৃষক পরিবার স্বাবলম্বী হবে, অপর দিকে পাহাড়ের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানায়, পাহাড়ী ঢালু জমিতে জুম ধান চাষের সাথে মিশ্র শস্য হিসেবে সাধারনত জুমিয়া কৃষকেরা কাউন চাষ করে থাকে। কাউন স্থানীয়দের কাছে ‘কৈন’ নামে পরিচিত। এ অঞ্চলের পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বাসিন্দা এবং বাঙ্গালীদের কাছে অতিথি আপ্যায়নে ও সামাজিক উৎসব-পার্বণে কাউনের পায়েশের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে কাউন একটি সুস্বাদু খাবার। দানা জাতীয় ফসলের মধ্যে কাউনের কদর পাহাড়ে ও সমতলে সর্বত্রই সমান জনপ্রিয়। এটি পুষ্টির চাহিদা পূরনেও সহায়ক। কাউন থেকে আমিষ ও খনিজ লবনের চাহিদা পূরন হয় বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
কৃষি বিভাগ ও জুমিয়া কৃষকেরা জানান, কাউন এক বীজপত্রী উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা সরষে দানার মত। পাহাড়ে বৈশাখ মাসে জুমে ধান বোনার সময় কাউন বীজ ছিটানো হয়। তবে জুমিয়াদের কাছে এটি এক প্রকার ধান হিসেবে পরিচিত। প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের আবাদ হয়। পানি জমেনা এমন বেলে দোয়াশ মাটিতে ফলন ভালো হয়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫০ কেজি পর্যন্ত কাউন উৎপাদন হয়।
আলীকদমের জুমচাষী রুইরাং ম্রো জানান, পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কাউন উৎপাদন হয় না, তবে বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জুমচাষে ধানের সাথে কাউনের মিশ্রচাষের ফলে আলাদা জমিরও প্রয়োজন হয় না। তাই খুব সহজেই কাউন চাষ করা যায়। লামা এলাকার জুম চাষী কাইফু মুরুং জানান, নিজেদের চাহিদার কারণেই জুমে তারা কাউন চাষ করে থাকেন। নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত হলে তা বাজারে বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রত কেজি কাউন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।
আলীকদম উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা জানান, সরকারি ভাবে চাষীদের বিনামূল্যে কাউন বীজ বিতরণের সুযোগ নেই। এ কৃষিপণ্যটি একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কৃষকরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাউন অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে। লামা উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, লামায় কি পরিমাণ জমিতে কাউন চাষ হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে জুমিয়া কৃষকেরা জুম চাষের সঙ্গে কাউন চাষ করে থাকেন। লামা ও আলীকদমে কাউন চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে কাউন চাষে সরকারী পৃষ্টপোষকতা কামনা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।