ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৭:২৮
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ২৭, ২০২৪

বাঁশখালীর পাহাড়ে বাড়ছে আদার বাণিজ্যিক চাষ, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষীরা হতাশ

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বাঁশখালীর পাহাড়ি অঞ্চলে এ বছরও ব্যাপকভাবে আদার চাষ হয়েছে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে পুকুরিয়া, সাধনপুর, বৈলছড়ী, পৌরসভা, শীলকূপ, জঙ্গল পাইরাং, চাম্বল, নাপোড়ায় ব্যাপকভাবে আদার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছরের রবি মৌসুমের শেষের দিকে এ উপজেলায় প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পাহাড়ি আদার চাষ হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পতিত জমিতে আদা চাষে তেমন বেশি সারের প্রয়োজন ও পরিশ্রম লাগেনা। তাই এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় এ ফসল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত জমি থেকে কাঙ্ক্ষিত আদা উৎপাদনের সম্ভাবনা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। হেক্টরপ্রতি ১২ থেকে ১৪ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন করা সম্ভব। আদা উচ্চমূল্য ও ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর এবং মসলাজাতীয় ফসল। নিত্যদিন রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে আদার জুড়ি নেই। ওষুধশিল্পে কাঁচামাল হিসেবেও আদার চাহিদা ব্যাপক। তাই সারা বছর বাজারে ভোক্তার কাছে এর চাহিদা বেশি।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, 'উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আদা চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণ উপযোগী জমি রয়েছে। এখানকার জমির মাটি উর্বর হওয়ায় নানা ধরনের সবজির চাষাবাদ বেড়েছে। আদা মূলত দামী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি মসলা। দেশে আদা চাহিদার তুলনায় বড় একটি অংশ অন্যদেশ থেকে আনতে হয়।বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জমিতে অন্য জমির চেয়ে বেশি আদার উৎপাদন হয়। এমন ধারণা থেকে এবার পাহাড়ি জমিতে আদার ব্যাপক চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় এবছর আদার ফলনও বেশী হয়েছে। পাহাড়ী এলাকাসহ উপজেলার প্রায় ৬ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে শুধু পাহাড়ে প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষাবাদ ভালো হয়। উঁচু বেলে দো'আঁশ, বেলে ও এঁটেল দো'আঁশ মাটি আদার ফলনের জন্য উপযোগী।'

উপজেলার জঙ্গল পাইরাং মুহুরীপপাড়া এলাকার আদাচাষী মো. সেলিম জানান, 'আমি এ বছর জঙ্গল পাইরাং পাহাড়ী এলাকায় এককানি জমিতে আদার চাষ করেছি। আমি পৌরসভায় বিদ্যুৎ হেলপার হিসেবে কাজ করি। পাশাপাশি আমার সন্তানসহ শ্রমিক দিয়ে আদার জন্য জমি প্রস্তুত, চাষ করে থাকি। শ্রমিকের মজুরী, সার, বীজসহ এককানিতে আমার খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আদা উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে হিসেব মিলিয়ে দেখেছি দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে। বাজারে পাইকাররা আমাদের থেকে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ১০০ টাকায় নিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে।'

উপজেলার আরেকজন আদাচাষী আমির হোসেন বলেন, 'এ বছর আমি পৌরসভার জঙ্গল জলদী ঢালারমুখ এলাকায় পাঁচ কানি জমিতে আদার চাষ করেছি। সবমিলিয়ে আমার খরচ পড়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। আদা বিক্রি করেছি প্রায় ১২ লক্ষ টাকায়। লাভ হয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এখানে নিজের পরিশ্রম, বিষ-সারের উচ্চমূল্য এবং পাইকারী মূল্যের বৈষম্য হিসেব করলে তেমন লাভ হয়নি। পাইকাররা আমাদের থেকে কেজী প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় ক্রয় করলেও তারা বাজারে খুচরা বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কেজিপ্রতি দেড়শ টাকা পাইকারিতে বিক্রয় হলে আমাদের ভালমতো পোষাতো। আমরা চাষীদের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশী লাভবান হচ্ছে।'

এ উপজেলার আদাচাষী শংকর দাশ, মোক্তার আহমদ, আজিজ, তপন দাশ, আবু শামা, অছিউর রহমান, আব্দুল মজিদ সহ অনেকেই দাবী করে বলেন, 'আমরা চাষীরা মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কৃষিকাজ করি। ফসল উৎপাদন করে বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্যমূল্য পাই না। বিষ-সারের উচ্চমূল্যের কারণেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত লাভ হয় না। বাহির থেকে আমদানীকৃত আদার মূল্যও বেশী। আমাদের বেলায় যতো বৈষম্য।'

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোহছন আলী বলেন, 'আমার দায়িত্বরত শুধু পৌরসভা ব্লকে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। আমি চাষীদের বিভিন্ন রোগ-বালাই, চাষপদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এখানে দিন দিন আদা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে কৃষকরা।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক বলেন, 'বাঁশখালীর পাহাড়ী এলাকা আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময়ী একটি কৃষি জোন বলা যায়। বাঁশখালীতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রচুর পরিমাণ আদার চাষ হয়েছে। প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে এবার। পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকেরা আদা চাষে আগ্রহ দেখাতে আদা চাষের ক্ষেত্রও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। আদা চাষ করে অনেকেই সাবলম্ভী হচ্ছেন। বাজারে আদার ভালো মূল্য থাকলে চাষীরা বেশ উপকৃত হবে। তাছাড়া আমরা চাষীদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি মাঠকর্মীদের দিয়ে।'

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram