সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ জনগণ জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স সহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল পলাতক রয়েছেন। তিনি কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় সব ইউপি সদস্যরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর আহম্মেদকে দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ইউপি সদস্যদের অভিযোগ নিয়োগ পাওয়ার পর একদিনও তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যাননি। দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। একটি স্বাক্ষরের জন্য আসা যাওয়ায় সাধারণ জনগনকে গুনতে হচ্ছে টাকা। আবার স্বাক্ষরের জন্য আসলেও প্রশাসকের সাথে দেখা করতে মিলছে না অনুমতি।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. ফরমান আলী জানান, তিনি দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য জন্মনিবন্ধনের জন্য যান। কিন্ত চেয়ারম্যান না থাকার কারণে স্বাক্ষরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে ১৫ দিন ঘুরতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদ। এতে কয়েকদিনের যাতায়াত করতে তার খরচ হয়েছে এক হাজার পাঁচশত টাকা।
দিঘলীয়া দেলুয়া গ্রামের মোঃ মোসা ইব্রাহিম তার জন্মনিবন্ধনের জন্য তিনদিন ধরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশানর ভূমি কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরছেন। মোসা বলেন, বেলা ২ টার পর স্বাক্ষর করেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
গত রবিবার দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় চেয়ারম্যানের সনদ পত্রের বই রাখা। সনদ পূরন করে ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে যেতে হয় প্রশাসকের কাছে। চেয়ারম্যানের সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন কয়েকজন বেকার যুবক। তারা জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জে পুলিশে লোক নিবে। যুবকরা অভিযোগ করে বলেন, দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশত টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েকদিন। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক বেলা ১১ টার পর অফিসে বসেন। অফিসে বসেই অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। আর আমাদের ভূমি অফিসের গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘন্টার পর ঘন্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবে না বলে অফিস থেকে পিয়ন জানিয়ে দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পর চলে যেতে হয়। এভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর একদিনের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদে বসেননি। ফলে ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন, চেয়ারম্যানের সনদ, নাগরিক সনদপত্র, বিভিন্ন ভাতার কার্ড ও কৃষকদের কৃষি কার্ড বিতরণ স্বাক্ষর করতে নাগরিকদের যেতে হচ্ছে প্রশাসকের কার্যালয়ে। ইউপি সদস্যরা আরো অভিযোগ করে বলেন, বেলা ২ টার পর স্বাক্ষর না করায় নাগরিকরা সেবা পেতে বিরম্বনার শিকার হচ্ছেন।
দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবার উদ্যোক্তা মো. সামিউল ইসলাম বলেন, আগে এক থেকে দুইদিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া যেত। এখন একটি জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। চেয়ারম্যান না থাকায় এ ইউনিয়নের মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রাশেদ ও ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মামুন হোসেন বলেন, আমরা সকল ইউপি সদস্যরা বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে সপ্তাহে অনন্ত একদিন ইউনিয়ন পরিষদে বসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি না বসে উপজেলায় তার কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ইউপি সদস্যরা আরো বলেন, অনুমতি ছাড়া তার কক্ষে প্রবেশ মিলে না।
সাটুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো. তানভীর আহম্মেদের কাছে নাগরিক হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। ইউনিয়ন পরিষদে বসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাগরিকের কাগজপত্রে তার নিজের প্রয়োজনে এসে স্বাক্ষর করে নিয়ে যেতে হবে।