ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:০৫
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: কুমিল্লার আহত জনি ও রাকিব চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুতের পথে

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: শরীরে বুলেট নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের জনি (২০) ও রাকিব (২১)। আন্দোলনে অংশ নিয়ে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত জনি চিকিৎসার অভাবে নিজ বাড়িতেই থাকছেন পরিবারের বোঝা হয়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজ বাড়িতেই পঙ্গু হওয়ার পথে আহত রাকিব।
আহত জনির বাড়ি উপজেলার হাওরা গ্রামে ও রাকিবের বাড়ি উপজেলার চিখুটিয়া গ্রামে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তাদের দুজনেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৫ আগস্ট চট্রগ্রামের লালদিঘী পাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন জানে আলম জনি। অন্তত দুই শতাধিক ছররা গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় তার পুরো শরীর। সেদিন ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান তিনি। অচেতন অবস্থায় রাস্তা থেকে জনিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সার্জারি ডাক্তারকে দেখানোর পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ দিয়ে পরদিন তাকে সেখান থেকে রিলিজ দেয়া হয়। উপায়ান্তর না দেখে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে পরিবারের লোকজন তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে।

চিকিৎসার পরবর্তী কার্যক্রম বাড়ি থেকেই শুরু করেন জনির পরিবার। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শরীরে বিঁধে যাওয়া এসব বুলেটসহ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তার চিকিৎসা। ঐ হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি না পেয়ে সেখান থেকে বাড়ি ফেরেন।

শরীরের ভিতরে থাকা অসংখ্য গুলি নিয়ে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় ভুগছেন জনি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে ৮টি গুলি বের করা হয় শরীর থেকে। পারিবারিক অচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াও তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। সাত হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন আতরের দোকানে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দোকানের চাকরিটাও হারাতে হয় তাকে। বন্ধ হয়ে যায় রোজগারের পথ। বর্তমানে অর্থাভাবে ঔষধ কিনতে পারছেন না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

একই তারিখে ঢাকার উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন রাকিব হোসেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ তার নাভির ডান পাশে গুলি লেগে মেরুদণ্ড দিয়ে বের হয়। পথচারীরা তাকে নিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান। ওখান থেকে স্থানান্তর করা হয় উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে। ৩ ঘণ্টা থাকার পর নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই অপারেশন হয় রাকিবের। ১৯ দিন পর পাঠানো হয় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ১০ দিন পর কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ডাক্তার নাফস ইনজুরির কথা বলেছে। ভালো হতে সময় লাগবে। এখান থেকে দশ দিন পর নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।

বর্তমানে হাঁটা চলা করতে কষ্ট হয় রাকিবের। স্ট্রেচারে ভর করেই যেতে হয় সামনের দিকে। চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড়মাস হাসপাতালের বারান্দায় ঘুরেছেন পরিবারের সদস্যরা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সামান্য ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিটুকুও হারিয়ে ফেলেন। রাকিবের বাবা নেই, ৫ ভাইয়ের সংসার আগলে রেখেছেন মা। ছেলের এমন অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন আকস্মিক বন্যায় থাকার ঘরে পানি উঠে গেছে। উপায়ান্তর না দেখে আশ্রয় নেন চাচার ঘরে। একদিকে চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে সংসার সামলানো। এ নিয়ে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন তার পরিবার। অন্যের সাহায্য ছাড়া বর্তমানে একমুহূর্তও চলে না তার। কষ্টের কথাগুলো প্রতিবেদককে এভাবেই বলছিলেন অসুস্থ রাকিব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে সম্প্রতি উপজেলায় এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেয়ার কথা জানান ভুক্তভোগী জনি ও রাকিব। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের তালিকা করা হচ্ছে। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে স্ট্রেচারে ভর করে গুলিবিদ্ধ রাকিব তুলে ধরেন তার মানবেতর জীবনযাপনের কথা। শত বুলেট বুকে ধারণ করে সেখানে যোগ দেন জনি।

জনি জানান, চিকিৎসার ভার বহন করতে না পারা পরিবারের অসহায়ত্বের কথা। নিজের গাড়িতে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াসহ চিকিৎসার সহযোগিতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা আহত দুই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান তারা। কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জনির শরীর থেকে বের করা হয় ৮টি গুলি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোহরগঞ্জের অনেকেই আহত হওয়ার খবর পাই। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বসে তাদের কথা শুনি। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রাকিব ও জনির বক্তব্যে উঠে আসে তারা আহত হওয়ার পর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করাসহ নানা অসহায়ত্বের কথা।

তিনি আরও বলেন, পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে ছুটে যাই তাদের বাড়িতে। পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের সুচিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জনির শরীর থেকে ৮টি বুলেট বের করা হয়। এখনও সে শতাধিক বুলেট বহন করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত রাকিবের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। তাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram