মাজহারুল ইসলাম রানা, চট্টগ্রাম নগর প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতা ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র সাবেক আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে শাহাদত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
শপথ শেষে ডা.শাহাদাত হোসেন দি বাংলাদেশ টুডে কে বলেন, চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে এমন একটি জায়গায় রয়েছে যেখানে পাহাড়, সমুদ্র ও প্রকৃতির অন্যান্য চিত্র। বাংলাদেশের জিডিপি'র চতুর্থ খাতটি অবদান রাখতে পারে পর্যটন। এই খাতকে ব্যবহার করে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যা প্রচারণাসহ নানা কারণে এই খাতটিকে ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই খাতসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি।
মেয়র হিসেবে ডা.শাহাদাত হোসেন শপথ গ্রহণের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যান, সেখানে জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি আয়োজিত মেজবানে অংশ গ্রহণ করেন। পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন জোনাকি কমিউনিটি সেন্টারে এ মেজবানের আয়োজন করা হয়। ডা.শাহাদাতের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামী মঙ্গলবার শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামে ফিরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানান চসিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি'র প্রার্থী ডা.শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। আদালত উক্ত মামলার সকল বিচারিক কার্য সম্পাদন করে শাহাদত হোসেনের পক্ষে রায় দেন এবং তাকে মেয়র হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে। উক্ত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র মো.রেজাউল করিম চৌধুরীও। পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো.তোফায়েল ইসলামকে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেন শপথ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে ১৯ আগস্ট মেয়রদের অপসারণের প্রজ্ঞাপনের সংশোধন করে একটি সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে ৩ নম্বর ক্রমিক বিলুপ্ত করা হয়েছে। ৩ নম্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র উল্লেখ ছিল। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪–এর ১৩ (ক) প্রয়োগ করে বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখন ঐ প্রজ্ঞাপনের ক্রমিক নম্বর ৩ বিলুপ্ত করে সংশোধন করা হলো।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি শিরোনামে বলা হয়েছে, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত, চট্টগ্রাম এ দায়েরকৃত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলার গত ১ অক্টোবরের আদেশে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ১নং বিবাদী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভোটের দিন হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এতে ভোটের উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ভোট শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে কোনো ভোটই হয়নি যা হয়েছে তা রাতেই শেষ করে দিনের বেলায় তামাশা দেখানো হয়েছে মাত্র।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া মুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় আপ্যায়ন সম্পাদক নাজিম উদ্দিন দি বাংলাদেশ টুডে কে বলেন, অন্যায় ও জুলুম যে আল্লাহ তায়ালা সহ্য করেনা এবং ভুক্তভোগীরা যে ন্যায় বিচার পায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো চট্টগ্রামের নতুন মেয়র ডা.শাহাদত হোসেন। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন,স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দাম্ভিকতার পতন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। ডা.শাহাদত জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে ও জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচন করেছে সুতরাং জনতাই তাকে মেয়রের আসনে অধিষ্ঠিত করছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিল্পী বলেন, অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আমি প্রত্যক্ষদর্শী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কিভাবে জবরদখল করেছিল তা ভাবলেই বিচলিত হই। ডা.শাহাদত তার উপযুক্ত সম্মান ও ন্যায় বিচার ফিরে পেয়েছেন। চট্টগ্রাম সহ দেশবাসী আজ আনন্দিত ও নিশ্চিত হয়েছে যে দেশে আবারও সঠিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।