মজিবর রহমান, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: জীবন-জীবিকার তাগিদে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা লাভের আশায় ভিটে বাড়ী বিক্রি করে প্রবাসে গিয়েও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় হানিফ হাওলাদার নামে এক যুবক। আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে দেশে ফিরে এসে ঠাই হয়নি বিদেশে যাওয়ার সময় বিক্রি করা পৈত্রিক নিবাসে। অবশেষে রাস্তার পাশে কোন ভাবে ছাপড়ার নীচে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সৌদি ফেরত হানিফ হাওলাদার। প্রতারণার শিকার হানিফ হাওলাদার উপজেলার ৫ নং সদর ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড মিঠাখালী গ্রামের মোঃ ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে।
অভিযোগে জানা যায়, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ ফজলু হাওলাদারের ছেলে আদম ব্যবসায়ী সৌদি প্রবাসী মোঃ লিটন হাওলাদার। গত ২০২১ সালে দুরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্রে লিটন মিয়া হানিফ হাওলাদারকে সৌদি আরব যাওয়ার পরামর্শ দেন। মোঃ হানিফ হাওলাদার লিটনের পরামর্শ গ্রহণ না করায় কৌশলে বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করান। আদম ব্যবসায়ী লিটন মিয়া হানিফ কে জানান, সৌদি আরবে তার একটি নিজস্ব রেস্তোরাঁর ব্যবসা রয়েছে।সেখানে তার কাজের ব্যবস্থা করবেন। দুই হাজার রিয়াল মাসিক বেতনের চুক্তিতে হানিফ হাওলাদারের কাছ থেকে লিটন মিয়া ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ভিসা দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। তিন মাসের মধ্যে সৌদি আর পাঠানোর কথা থাকলেও হানিফ কে বিভিন্ন অজুহাতে বছরের পর বছর ঘুরাতে থাকে। লিটন মিয়ার পরিবারকে বার বার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর চাপের মুখে পড়ে দুই বছর পর লিটন মিয়া একটি ফ্রি ভিসা দিয়ে বিমান টিকিট ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ পুনরায় আরো ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দাবি করে।
হানিফ হাওলাদার নিরুপায় হয়ে ব্র্যাক থেকে পাওয়া বাচ্চা সহ তার পোষা গাভী বিক্রি করে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সম্প্রতি সৌদি আরব যায়। সেখানে গিয়ে লিটন মিয়ার কোন রেস্তোরাঁর ব্যবসা খুজে পায়নি। এমনকি হানিফ সৌদি আরব যাওয়ার পর লিটন মিয়া তার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। দিনের পর দিন না খেয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয় হানিফ হাওলাদার কে। বাধ্য হয়ে হানিফ হাওলাদার বাহিরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিষয়টি লিটন মিয়াকে অবহিত করেন। এরপর লিটন মিয়া হানিফ হাওলাদারকে একটি কক্ষে আটকিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এক বছরের আকামা দেয়ার চুক্তি থাকলেও তিন মাসের একটি ভূয়া অনুমতি পত্র (আকামা)দিয়ে কাজে পাঠান লিটন। সৌদি পুলিশ হানিফ হাওলাদারকে পাকড়াও করে ভূয়া কাগজ তৈরির দায়ে হানিফ হাওলাদারকে হাজতে নিয়ে যায়। একমাস পর হানিফ হাওলাদারকে সৌদি পুলিশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। সম্প্রতি হানিফ সর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আদম ব্যবসায়ী লিটন মিয়ার পরিবারের সাথে টাকা ফেরত পাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গত ২৫ অক্টোবর ২৪' মঠবাড়িয়া থানায় আদম ব্যবসায়ী লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। লিটনের পিতা ফজলু হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করলেও টাকা ফেরত দেয়ার বিষয় অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয় মঠবাড়িয়া থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান জানান, হানিফ ও লিটনের পিতা ফজলু সহ গন্যমান্য ব্যক্তি নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সৌদি আরব গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে দেশে ফিরেন হানিফ হাওলাদার। সে কারনে লিটনের নিকট টাকা পাবে। টাকা দেয়ার জন্য আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত লিটনের পিতা ফজলু হাওলাদার কে সময় দেয়া হয়েছে।