সুজন হোসেন রিফাত, রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি হত্যা মামলায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে মাদারীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাজিদ উল হাসান চৌধুরী এই আদেশ দেন। এর আগে ব্যাপক পুলিশী পাহারায় মাদারীপুর কারাগার থেকে সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে আদালতে তোলা হয়। পরে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করলে শুনানী শেষে বিচারক দুইজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয় তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত ও দিপ্ত দে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপকে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মাদারীপুর কারাগারে হস্তান্তর করা হয় সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে। পরে রোববার তোলা হয় মাদারীপুরের আদালতে।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ও মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আরমিন বলেন, দুটি হত্যা মামলা সাবেক দুই সংসদ সদস্যকে আসামী করা হলেও তারা কেউই ঘটনার সাথে জড়িত নন। রাজনৈতিক ফায়দার উদ্দেশ্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে শুনানী শেষে সাবেক দুই সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার নথি ও আদেশের কপি সংগ্রহ করে জেলা জজ আদালতে জামিন চাওয়া হবে।
জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গোলচত্বর থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিল আন্দোলনকারী। খাগদী বাসস্ট্যান্ডের দিকে এলে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের ঠেঁকাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলিও ছোড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তাওহীদ সন্ন্যামাত ও রোমান বেপারী নামে দুইজন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যার ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় এই মামলাটি করেন। মামলায় আসামী করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুর-০১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-০২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, মাদারীপুর-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউন্দিন নাছিম, মাদারীপুর-০৩ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান আসিব খান, শাজাহান খানের ছোট ভাই ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান, মাদারীপুরের সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খান যাচ্চু, কালকিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, কালকিনি পৌরসভার সাবেক মেয়র এসএম হানিফ, মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিক, সাধারণ সম্পাদক বায়েজিত হাওলাদারসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৯২ নেতাকর্মীদের।
এর আগে ২৪ আগস্ট ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা গ্রামের নিহত পিকআপ চালক রোমান বেপারীর স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৩০০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় মাদারীপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নোবেল বেপারীকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হয়েছে।
এদিকে গত ১৯ জুলাই সকালে কোটা সংষ্কার আন্দোলনে যোগ দেয় বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শহরের শকুনী লেক এলাকায় আসলে আসামীরা মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীকে দিপ্তকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে লেকের পানিতে পড়ে যায়। ওইদিন দুপুরে শকুনী লেক থেকে দিপ্ত’র মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এই ঘটনায় জড়িত থাকায় গত ৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ও সাবেক সরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ২৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন শহরের পানিছত্র এলাকার বাসিন্দা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী (৩৮)।
মামলার বাকি আসামীরা হলেন, সাবেক সরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ছাড়াও মাদারীপুর-০১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-০২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য-০২ শাজাহান খান, মাদারীপুর-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাদারীপুর-৩ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোহবান মিয়া গোলাপ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, মাদারীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিকসহ মোট ২৭ জন।