কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তার পানি হ্রাস পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চরাঞ্চলের বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও চারিদিক এখনও তলিয়ে আছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, শনিবার সন্ধা ৬ টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও পাটেশ্বরী পযেন্টে দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে পানি ভেঙ্গে ঘর-বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে উঁচু জায়গায় অবস্থান করা বাসিন্দারা।
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ পর বাড়িতে ফিরলেও ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়িতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। হাতে কাজ না থাকায় পড়েছেন খাদ্য সংকট। চারণ ভূমি প্লাবিত থাকায় এবং অনেকের জমানো খড় নষ্ট হওয়ায় পড়েছেন গো-খাদ্যের সংকটেও।
এ অবস্থা চলতে থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বন্যা কবলিতদের।
চরাঞ্চলের বন্যা বাসিন্দারা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তারা পানিবন্দি জীবন-যাপন করলেও মিলছে না কোন সহায়তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৫৫ টি ইউনিয়নের সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসব চরাঞ্চলের কোথাও কোথায় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চরযাত্রাপুরের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, আমরা শুধু জানতে পারি যে বিভিন্ন চরে রিলিফ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে দেয়া হয়নি। শুধু একজন এসে চিড়া-মুড়ি দিয়ে গেছে। এছাড়া সরকারি কোন চাল বা অন্য কোন সহায়তা পাইনি।
একই উপজেলার চর ভগবতীপুরের আমেনা বেগম জানান, এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা তারা পাননি। তবে পাশের চরের বাসিন্দাদের ৫ কেজি করে চালের সাথে ডাল দেয়া হয়েছে শুনেছি।বন্যা কবলিত সবগুলো ইউনিয়নের চিত্র একই রকমের।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় আমার ইউনিয়ন। এখানে ১২ দিন ধরে প্রায় ১২ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত জীবন- যাপন করছে। আমি তালিকা করে পাঠিয়েছি। এরমধ্যে সরকারি ভাবে মাত্র ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা দিয়ে মাত্র ১৫ শ পরিবারকে দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকী পরিবারগুলোকে দেয়া সম্ভব হয়নি। আমি বাকী পরিবারগুলোকেও সহায়তা দেয়ার আবেদন জানিয়েছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় বন্যা কবলিতদের জন্য ৪শ ৮৯ মেট্রিক টন চাল, ৩৫ লাখ টাকা ও ২৩ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।