গোপাল অধিকারী, ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: ঈশ্বরদী উপজেলা জুড়ে নানা রঙের আলপনা আর দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি। বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালগুলোতে যেখানে আগে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা ও বিভিন্ন পোস্টারে ছেয়ে ছিল, আর এখন সেই দেয়ালগুলোতে শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলির আঁচড় পড়েছে। সেগুলো এখন নতুন রূপে সেজেছে। আর এ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্র আন্দোলনের পর সারা দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে রঙ-তুলির আঁচড়ে দেয়াল সাজাতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতের তুলিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। কালো, সাদা, লাল, নীল, হলুদ-এ যেন রঙের এক মেলা! দেখা গেল, কেউ রঙ লাগাচ্ছে, কেউ পানি ছিটাচ্ছে- এ যেন এক মিলন মেলা! প্রতিটি মুখে যেন ফুটে উঠছে এক অনাবিল আনন্দ।
রোদের মধ্যেই যেন একটা মায়া লুকিয়ে আছে। কারও হাতে রঙের তুলি, কারও হাতে পানির বোতল- এ যেন এক স্বপ্নের রূপ! সবাই মিলে যেন একটা নতুন স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রতিটি ক্যালিওগ্রাফির আঁচড়ে যেন ফুটে উঠছে এক নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা। এ সময় বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েরা দেয়ালে লিখনে অংশ নেয়।
শহর আমাদের, দায়িত্ব আমাদের, আমাদের ঈশ্বরদী, আমাদের অহংকার, স্বাধীনতার সূর্যোদয়, বল বীর বল উন্নত মম শীর, আমরাই গড়ব দেশ, মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ এমন প্রতিবাদী শ্লোগান শোভা পাচ্ছে শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে।
১২ আগস্ট রবিবার দুপুরে শহরের হান্নানের মোড়, মহিলা কলেজের দেওয়াল, ঈশ্বরদী-পাবনা সড়কে, পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে ও দাশুড়িয়া এম এম উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে বিজয় উল্লাসের বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়। দিনভর এসব দেয়ালে গ্রাফিতির কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ছাত্র-জনতার বিজয়ের বিভিন্ন প্রতীকী ছবিও আঁকা হয়।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের রিক্ত নামে এক শিক্ষার্থী জানান, রাজনৈতিক পোস্টার, বিজ্ঞাপন কিংবা দেয়াল লিখনের বদলে তাদের সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটছে দেয়ালগুলোর প্রতিটি ইঞ্চিতে। সকলে এই পরিবর্তনে মুগ্ধ। তাদের মতে, এ যেন এক নতুন সূচনা, যেখানে শিক্ষার্থীদের কর্মপ্রবণতা এবং সৃষ্টিশীলতা নতুন আশার সঞ্চার করছে।
ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফা ইসলাম বলেন, ‘কলেজের সামনের দেয়ালসহ কলেজের জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এসব পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করে সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়াল লিখন চলছে।’
খায়রুল ইসলাম বাবু নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘আগে যেসব দেয়াল রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত হতো, এখন সেগুলো পরিণত হয়েছে দেয়ালে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এগিয়ে এসে দেয়ালে যোগ করেছেন শিল্পের ছোঁয়া।’
ঢাকা তেজগাঁ কলেজে পড়ুয়া এহসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দেওয়ালগুলো এতদিন অযত্নে-অবহেলায় ছিলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগানে পরিপূর্ণ ছিল। আমরা আজ গ্রাফিতি করে পুরো দেওয়ালগুলো সাজিয়েছি। পথচারীরা অনেক প্রশংসা করছেন। এখন দেখতেও অনেক সুন্দর লাগছে। এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছি এজন্য আমি গর্বিত।’