জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের পেকুয়া-চকরিয়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অন্তত ২০ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় পেকুয়া ও চকরিয়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া চকরিয়ার হারবাং গাইনাকাটা এলাকায় ভারী বর্ষণের ফলে ২০ থেকে ২৫টি কাঁচা ঘর ধ্বসে পড়ে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থান করা লোকজনকে সরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের নলবিলা এলাকায় বন্যার পানিতে শতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে বয়স্ক, শিশু ও নারীরা বিপাকে পড়েছেন। কাছে সাইক্লোন শেল্টার ও স্থানীয় লোকজনের বিল্ডিংয়ে অনেককে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। তবে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বলেন, পহরচাঁদা এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকায় নিজ তহবিল থেকে সাধ্যমত শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
কৈয়ারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়ন মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত হওয়ায় অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৫ ইউনিয়ন, বদরখালী, কোনাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়া এলাকায় পানি নিস্কাশনে জলমহালের স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে। এসব এলাকার মৎস্যঘের, ধানক্ষেত ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার টৈটং মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী, শিলখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা এলাকায় অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার।
পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের জারালবুনিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলে অনেক বাড়িঘর, ফসলী জমি এবং জারালবুনিয়া মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ভেঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম ও পেকুয়া উপজেলা প্রকল্ল বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহের জানিয়েছেন, বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের জন্য একটি চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এসব পণ্য হাতে এলে দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হবে।
এদিকে রামু ও ঈদগাঁও উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। আবহাওয়া অফিস কক্সবাজার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান।