জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি: আমার ৯০ বছর বয়সে এমন বন্যার পানি দেখিনি। গত পাঁচদিন ধরে স্ত্রী, পুত্রবধূ ও সন্তানদের নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। পাঁচটি গরুর দিকে তাকিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। আমার পালিত পাঁচটি গরুকে যেমন ভালোবাসি আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও আমি তেমন ভালোবাসিনা। আমি একজন কর্মজীবী মানুষ। কর্ম করে খাই। চিন্তা করলাম আমার আদরে পালন করা গরুগুলো যদি বন্যার পানিতে মরে যায় তাহলে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা বেঁচে থেকে কি খাব? এমনটা ভেবেই বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিলাম। গত পাঁচদিন ধরে বিএনপি ও শিবিরের পোলাপাইনরা দৈনিক এক বেলা করে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। সে খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। আমার বর্তমান বয়স প্রায় ৯০ বছর। জীবনে এমন বন্যার পানি কখনও দেখিনি। যারা আমাদের এমন ক্ষতি করল, তাদের বিচার আল্লাহ করুক। আমি সহ আমার গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে। চাল-ডাল, কাপড়-চোপড় সব পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কার কাছে সাহায্য চাইব। সরকারের কাউকে তো চিনিনা। আমি কৃষি কার্ড করেও জীবনে কোন সাহায্য পাইনি। বাকি জীবনে সরকার থেকে কোন সাহায্য পাব বলে আশা করিনা।
এসব কথাগুলো রোববার দুপুরে বলেন ফেনীর সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া চরসাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ কৃষক নুর ইসলাম।
তিনি পাঁচ সন্তানের জনক। তার সঙ্গে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক মিয়া। এভাবে ওই গ্রামের শতাধিক লোক এক সঙ্গে বেড়িবাঁধের ওপর ত্রিপল টানিয়ে ও খুঁপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। সবার চোখেমুখে যেন আতঙ্কের ছাপ। বাড়ি ঘরের পানি এখনো সরেনি। এভাবে কতদিন থাকতে হবে জানেননা তারা। বীর মুক্তিযেদ্ধা সামছুল হকের একটি গরু শনিবার রাতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। গত ১৯ আগস্ট থেকে ফেনীর ছয় উপজেলার মানুষ ভারতীয় পানির আগ্রাসনে নিমজ্জিত হতে থাকে। আকস্মিক এ বন্যায় ফেনীতে ১২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আটকে পড়া লোকজন খাদ্য সংকটে ভুগছে। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবীদের ত্রাণবাহী গাড়িগুলো বন্যার পানির কারণে বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে।