ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: হাসিনা সরকারের ফরমায়েশি রায়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে ফাঁসি, যাবজ্জীবন ও ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশে কারাবন্দি থাকা পাবনার ঈশ্বরদী বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর মধ্যে ৩০ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের আপিল বিভাগের বিজয়-৭১-এর ১১ আদালতের যৌথ বেঞ্চের বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার শুনানি শেষে বন্দিদের জামিন দেন।
ঈশ্বরদী বিএনপির ৩০ নেতাকর্মীর জামিন লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী।
যাবজ্জীবন রায়ে বন্দি জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- আমিনুল ইসলাম আমিন, আজাদ হোসেন খোকন, ইসমাইল হোসেন, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান শিমুয়া, আনিছুর রহমান ওরফে সেকম, নুরুল ইসলাম আক্কেল, মো. রবি, এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মামুন, মমিন ওরফে মামুন, সেলিম আহমেদ, কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম লিটন, আবদুল্লাহ আল মামুন, তাহাজুল ইসলাম লাইজু, আবদুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম টেনু, আলমগীর, আবুল কালাম আজাদ ও এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম পায়েল।
আর ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ জনের জামিন মিলেছে। তারা হলেন- ইউপি চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান (ভিপি রাজু), আজমল হোসেন ডাবলু, আনোয়ার হোসেন জনি, রনো, বরকত আলী, চাঁদ আলী, এনামুল কবীর, মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ুন কবীর দুলাল, জামরুল, তুহিন বিন সিদ্দীক ও ফজলুর রহমান প্রামাণিক।
বিচার চলাকালীন পাঁচ আসামি মারা যান। তারা হলেন- এহতেশাম, আলমগীর হোসেন, ওসিয়া, জাবেদ করিম খোকন ও আলমগীর হোসেন।
রায়ের পর কারাগারে মারা গেছেন- কমিশনার আব্দুল হাকিম টেনু ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই মামলা থেকে বর্তমানে জামিনে মুক্ত ছিলেন হুমায়ুন কবির দুলাল সরদার, মুক্তার হোসেন। আর অসুস্থ থাকার কারণে জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তাহাজুল ইসলাম লাইজু ।
অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী জানান, ৩০ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় গত ২০১৯ সালের ৩ জুলাই চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত সরকারের ফরমায়েশি রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক রুস্তম আলী।
এই ফরমায়েশি রায়ে স্থানীয় বিএনপির মোট ৫২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ৯ জনকে ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারক এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারক মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের যৌথ বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। শুনানি শেষে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামি বাদে ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জনকে জামিন দেন আদালত। মামলা চলাকালীন ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু বরণকারীদেরও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী ও অ্যাডভোকেট এ এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন।
তিনি আরো জানান, ৩০ বছর আগে ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেন বহরে হামলা ও গুলিবর্ষণের মিথ্যা মামলার রায়ে স্থানীয় বিএনপির ৯ নেতাকে ফাঁসি, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১২ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় মৃত্যুদণ্ড আদেশপ্রাপ্তরা হলেন- তৎকালীন ছাত্রদল নেতা বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্যানেল মেয়র শামসুল আলম, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম আখতারুজ্জামান, বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম ভিপি শাহিন, বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম অটল, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন, ছাত্রনেতা মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ মামলাটির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদেরও জামিনের বিষয়টি আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া স্থানীয় বিএনপির ৩০ নেতাকর্মীর পরিবার, স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেছে। বন্দিদের পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, হাসিনা সরকারের এই মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ে এত দিন এত মানুষের জীবন ও পরিবার হুমকির মুখে পড়ে ছিল। এত দিনে সুবিচার মিলছে। বাকিদের বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।