ডাবলু কুমার ঘোষ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ভারতের ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দেয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মায় তেমন উল্লেখযোগ্য হারে পানি না বাড়ায় নির্ভার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, অন্যান্য বছরে এই সময়ে পদ্মা নদীতে যে পরিমাণ পানি থাকে, এখনও তার থেকেও কম পানি রয়েছে। এছাড়াও ফারাক্কা গেট খোলার প্রভাবে নদীতে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, পদ্মা নদীতে সামান্য কিছুটা পানি বাড়লেও আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে, বন্যা মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি রেখেছে জেলা প্রশাসন।
হঠাৎ করেই সোমবার বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার পাড় ও নদীর মাঝে থাকা বিভিন্ন চরের বাসিন্দারা। এমনকি সারারাত হঠাৎ বন্যার আতঙ্কে কেটেছে তাদের। অনেকেই বন্যার আশঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গবাদিপশু ও নারী-শিশুদের নিয়ে র্নিঘুম রাত কেটেছে পদ্মাপাড়ের লোকজনের। তবে সকাল হতেই সকল আশঙ্কা দূর হয়েছে তাদের।
পদ্মানদী তীরবর্তী বাসিন্দা মোঃ নাসির জানান, ভারতের ফারাক্কা বাঁধ হতে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভাটিতে বাংলাদেশের সীমানায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়ন। ভারত থেকে অতিরিক্ত পানি আসলে দেশে প্রথম প্লাবিত হওয়া এলাকার মধ্যে মনকষা ছাড়াও রয়েছে পাঁকা, উজিরপুর, নারায়নপুর, আলাতুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীতে মাত্র ৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা স্বাভাবিক বলছেন স্থানীয়রা।
পদ্মাপাড় ও চরের বসবাসকারী বাসিন্দা মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, ভাদ্র মাসে পদ্মায় পানি বাড়ে এবং বন্যার সম্ভবনা থাকে, কিন্ত বর্তমানে পানি বৃদ্ধির যে হার, তাতে বন্যার আশঙ্কা নেই, তবে পানি হ্রাসের সাথে সাথে এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের শংকায় রয়েছেন। আর যদি হঠাৎ ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পায়, সেক্ষত্রে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী এলাকাবাসীর।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দীন জানান, গতকাল নয়, আগে থেকে ফারাক্কা গেট খোলা ছিল। পদ্মায় বিপদসীমা হচ্ছে ২২ দশমিক ০৫ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর ২০ দশমিক ৫৫ মিটার। এখনও পানির স্তর বিপদসীমার দেড় মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির যে হার, তাতে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ফারাক্কার প্রভাবে বন্যার আশঙ্কা নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী অঞ্চলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, ফারাক্কার গেট খোলার খবরে জেলা ও উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বন্যার আগাম সর্তকর্তা নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র, শুখনো খাবার, ওষুধ, ৪’শ লাইফ জ্যাকেট, ৬’শ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১২ লাখ টাকা।
পদ্মার অববাহিকতায় জেলার সদর উপজেলার আলাতুলী, নারায়ণপুর, চরবাগডাঙ্গা, শাহাজাহানপুর ও সুন্দরপুর এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।