ঢাকা
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:২০
logo
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪

কুমিল্লায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৬৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমি, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণের কারণে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে টইটম্বুর কুমিল্লার গোমতী নদী ও সালদা নদী। ইতোমধ্যে গোমতীর উত্তর পাশের বুরবুরিয়া বাঁধ ও সালদা নদীর দক্ষিণ পাশের একটি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় কুমিল্লার দুই উপজেলা বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ায় বসবাসরত বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাছাড়া, দুই উপজেলা ছাড়াও টানা বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গিয়েছে কুমিল্লার আরো ১২ টি উপজেলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে, ফেনীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ। আর এতে জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ লাখেরও বেশী মানুষ। পাশাপাশি, বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে জেলার প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এতে করে কুমিল্লার প্রান্তিক কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, এ অঞ্চলের বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশাগুলোর মধ্যে কৃষিকাজ ও মৎস আহরণ ছিলো অন্যতম। বন্যার পানিতে মাছের ফিশারীগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিতে কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় অত্র অঞ্চলের মানুষদের ভবিষ্যতে খাদ্য ও অর্থ সংকটে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে কৃষিই ছিলো কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন। বন্যার পানিতে সেই কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলার বিপুল সংখ্যক পরিবার। এদিকে, বন্যার পানিতে সবকিছু হারানো দুর্গম অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের অনেকেই এখনো প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়নি বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তাছাড়া দুর্গম অঞ্চকগুলোর কোনো কোনোটিতে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ বিতরণও হয়নি।

এদিকে, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গোমতী নদীর পানি সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বর্তমানে পানি রয়েছে বিপদসীমা থেকে ৭ সে. মি উপরে। তাই এখনো তলিয়ে রয়েছে জেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জুরাইন, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর, বেড়াজাল, শ্যামপুর, গোবিন্দপুর সহ আরো বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গিয়েছে পানিতে। পাশাপাশি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া, চান্দলা ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নানকরা, ফালগুনকরা, আটগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর, রায়কোট দক্ষিণ, বাঙ্গড্ডাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন তলিয়ে গিয়েছে পানিতে।

এদিকে, কৃষি জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগ ও হতাশায় আছেন কৃষি কাজ করা এই জেলার নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরাও। চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ডুকে পড়ায় আমন ধান ও আউশ ধানসহ নানান শাক সবজি ও অন্যান্য ফসল এখন পানির নিচে। টানা এক সপ্তাহ পানির নিচে থাকায় ফসল আর রক্ষা করা যাবে না বলে জানিয়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। এর মধ্যে অনেক কৃষকের লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, মূলা, লাল শাকসহ আরো বিভিন্ন জাতের সবজি পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সব হারিয়ে এখন হা-হুতাশ করছেন। তারা বলছেন, আমাদের আর বাঁচার মতো কিছুই রইলো না। ঘর গেলো, ক্ষেত খামারও চলে গেলো। চাষ করা জমিগুলোও পানির নিচে। কি নিয়ে বাঁচবো আমরা।

কথা হয় বুড়িচংয়ের জুরাইন এলাকার কৃষক হানিফ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টি ভাল হওয়ায় ফসলও ভালো হবে এমন ধারণা করেছিলাম। ৫ বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম, আবার ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের শাকসবজি করেছিলাম। এখন বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেলো। এতদিন পানির নিচে থাকায় আর কিছু টিকবে না। কি খেয়ে বাঁচবো, সংসার চলবে কি করে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আইয়ুব মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার পানিতে জেলার প্রায় ৬৩ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সাধারণত পানির নিচে চার পাঁচ দিন থাকলেই বীজতলা সহ আমন ধান ও আউশ ধান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ধারণা করা হচ্ছে পানিতে তলিয়ে যাওয়া কোন ফসল আর টিকবে না। তবে যতদ্রুত পানি কমবে, ততই কৃষকরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

এদিকে, কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় গোমতী নদীর পানি এখন বিপদ সীমা থেকে ৭ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। সাধারণত গোমতী নদীর পানির মূল লেভেল ১১.৩ মিটার ধরা হয়। এই লেভেলে পানি নেমে আসলে, লোকালয়ে আর পানি ঢুকবে না।

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের একটি ৩ নং সতর্ক সংকেত দেওয়া ছিল, সেটি এখন আর নেই। তবে, আগামী ২৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram