মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: কথায় আছে-কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। এমনই দৃশ্য দেখা গেলো মুহুরী নদীর মিরসরাই অংশে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায়। সেখানে রীতিমতো মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে মিরসরাই উপজেলা। এই উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয় দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন খ্যাত মুহুরী প্রজেক্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে সবগুলো মাছের ঘের। একদিকে বন্যার কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ছাড়া, অন্যদিকে ঘের প্লাবিত হওয়ায় বিপর্যস্ত এখানকার মৎস্য চাষিরা। এ অবস্থায় নদীতে মাছ ধরার উৎসবে মেতেছে শত শত মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) উপজেলায় মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক ফুট উচ্চতায় প্রজেক্ট এলাকায় মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। সেই পানি মুহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগর যাওয়ার পথে উপকূলবর্তী মুহুরী প্রজেক্ট বাঁধে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও মাছ ধরতে দেখা গেছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া মাছ স্রোতে লাফিয়ে উঠছে।
মাছ ধরতে আসা নুরুল আনোয়ার হোসেন টিপু বলেন, ‘আমি দুবাই থাকি। তিন মাস আগে দেশে এসেছি। সবাই জাল দিয়ে মাছ ধরছে দেখে আমিও জাল নিয়ে এসেছি। দুপুর থেকে প্রায় ১৫ কেজি মাছ পেয়েছি। আমার মতো অনেকে মাছ পেয়েছে।’
মাছ ধরতে আসা আবু সালেক বলেন, প্রবল স্রোতে মাছগুলো বঙ্গোপসাগরের দিকে যাচ্ছে। আমরা কয়েকশ লোক একসঙ্গে মাছ ধরছি। কেউ জাল দিয়ে আবার কেউ মশারি বা গোল জালি দিয়ে মাছ ধরছেন। জনপ্রতি ২০-৩০ কেজি মাছ পাচ্ছি। এগুলো সব মুহুরী প্রজেক্টের মাছ।’
মিরসরাই সদরের তালবাড়িয়া এলাকা থেকে মাছ ধরতে এসেছেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীতে স্রোতের কারণে অনেক মাছ ভাসছে। অন্যদের দেখাদেখি আমরা তিনজন জাল নিয়ে মাছ ধরতে এসেছি। ৩০ কেজির মতো মাছ পেয়েছি।’
মৎস্য চাষি কামরুল হোসেন, শেখ ফরিদ, কামাল উদ্দিন ও মুফিজুল ইসলাম মিল্টনের সঙ্গে। তারা বলেন, বন্যার পানিতে সবগুলো মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছগুলো নদীতে চলে গেছে। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। যে ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে কাটিয়ে উঠবো মাথায় আসছে না।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মিরসরাই উপজেলায়। এই উপজেলার দুই হাজার ৪২৯ সেক্টরের তিন হাজার ৭০০ পুকুর দীঘি ও খামারের ৮ হাজার ৫৯৬ দশমকি ৪০ মেট্রিক টন মাছ ১ মেট্রিকটন পোনা ও অবকাঠামোসহ ১৪২ কোটি ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।