কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনে আহত শিক্ষার্থী আশিক বাবুুর লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌছালে শুরু হয় শোকের মাতম। গত ৪ আগষ্ট জেলা শহরে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাথায় আঘাত পেয়ে ২৮ দিন চিকিৎসার পর রোববার দুপুরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু হয়। পরে কায়েক দফা জানাজা শেষে সোমবার দুপুরে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আশিকের লাশবাহী গাড়ি বাড়ির পাশের স্কুল মাঠে পৌছাতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। পুরো বাড়ি জুড়েই চলতে থাকে শোকের মাতম। শোকে কাতর হয়ে পড়েন এলাকাবাসীও।
গত ৪ আগষ্ট কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একসাথে যোগ দেন বড় ভাই আশিক বাবু ও ছোট ভাই আতিকুর রহমান। এসময় সংঘর্ষে আহত হন দুই ভাই। পরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ছোট ভাই আতিকুর সুস্থ হয়ে উঠলেও বড় ভাই আশিকুরের মাখায় গুরুত্বর আঘাত লাগায় তাকে নেয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর রেফার্ড করা হয় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সেখানেই গত রোবাবর দুপুরে মৃত্যু বরণ করেন আশিকুর। তার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আশিকের জানাজা শেষে লাশ পাঠিয়ে দেয়া হয় কুড়িগ্রামে। জেলা শহরে আশিকের লাশবাহী গাড়ি পৌছালে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় শহীদ মিনার এলাকায় জানাজার আয়োজন করে জেলা সমন্বয়করা। পরে আশিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজ ও নিজবাড়ির পাশের স্কুল মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। আশিকের এমন মৃত্যুতে হতবিহবল শোকাহত পরিবারসহ স্থানীয়রা। এসময় আশিক বাবু হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস ছালাম জানান, আশিক খুব ভালো ছেলে ছিল। তারা দুই ভাই মিলে বাড়ি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুড়িগ্রামে গিয়ে আহত হন। ছোট ভাই আতিকুর সুস্থ হলেও বড় ভাই আশিক মাথায় গুরুত্বর আঘাত নিয়ে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আশিকের। আমরা তার হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করছি।
নিহত আশিকের বাবা মো: চাঁদ মিয়া জানান, আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। কোটা বিরোধী আন্দোলনে দুই ছেলে যোগ দিয়ে আহত হয়। ছোট ছেলে সুস্থ হলেও বড় ছেলে মারা গেছে। আমার আশা ভরসা সব শেষ। আমি কার কাছে বিচার চাবো।
আশিকের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ স্বজনদের। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ আশিকের স্মৃতি ধরে রাখতে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ দিনের শোকসহ স্মৃতিফলক স্থাপনের কথা জানায় অধ্যক্ষ।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার সরকার জানান, পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র আশিকের মরদেহ কুড়িগ্রামে পৌছানোর পর প্রথমে মহীদ মিনার ও পরে পাঁচপীর কলেজ মাঠে জানাজা পড়ানো হয়। সর্বশেষ তার গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। আমরা কলেজ থেকে আশিকের মৃত্যুতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছি। পাশাপাশি শহীদ আশিকের স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতি ফলক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা এলাকার কৃষক চাঁদ মিয়ার ছেলে আশিক। মা হারা দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় আশিক।