শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: বন্যায় গোমতী নদীর স্রোতের কবলে থামছেনা কুমিল্লা তিতাস উপজেলা নারান্দিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ার ঘর বাড়ি ভাঙন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সিদ্ধেশ্বরী রেগুলেটর গোমতী বেড়ীবাঁধ। ভাঙন থেকে যা মাত্র ৬০ ফুট দুরত্বে রয়েছে।
উভয় পাড়ের ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে ৬০টি পরিবার। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর তীরবর্তী শত পরিবার নদীভাঙন আতঙ্কে খোলা আকাশের নীচে রাতজেগে ভাগাভাগি করে পাহারা দিচ্ছেন নারী পুরুষ। এছাড়া প্রতি বছর শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যাবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। দিশেহারা এখানকার শত শত পরিবার। টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গোমতীতে ক্রমশই বাড়ছে স্রোতের গতি। হুমকির মুখে রয়েছে উভয় পাড়ের শত শত বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এ থেকে রেহায় পেতে সর্ব মহলের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহর অধিক সময়ে নদী ভাঙনে অনেকের বসতভিটা, জমিজমা' ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। স্রোত বাড়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার অন্যত্র ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ বিল্ডিং এর ভেতর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন, আবার কেউ আধা পাকা ঘরের টিনের চাল খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। সর্বক্ষণ আতংকে, অনিদ্রা, অনাহারে প্রহর গুনছেন সহায়, সম্বলহীন মানুষগুলো।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবৎ আমরা এই গড়া এবং ভাঙনের খেলা খেলছি। আমরা আর পারছিনা আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। ভাঙনের এই তাণ্ডব ছেড়ে হাজারো পরিবার অন্যত্র চলে গেলেও আমরা পারছি না আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে। আমাদের আপনারা বাচাঁন।
পুর্বপাড়ের সমাজসেক ডা. গোলাম জিলানী ও জালাল সরকার বলেন, নারান্দিয়া গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়, বিশেষ করে পূর্ব পাড় সরকার বংশ ও ভূইয়া পরিবার সম্পুর্ন নিঃস্ব হয়ে গেছে। পথে বসে গেছে অনেকেই। তাছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে সিদ্ধেশ্বরী রেগুলেটর গোমতী বেড়ীবাঁধ। এটি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কোটি কোটি টাকার মৎস্য প্রকল্পের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পশ্চিম পাড়া সাবেক মেম্বার মফিজুল ইসলাম জানান, আমাদের পশ্চিম পাড়া এলাকায় অনেকই ভীটেবাড়ি হারিয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাইমারি স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। মৎস্য প্রকল্পও নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাড়ীঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং বেড়িবাঁধসহ এসব রক্ষার্থে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কে অনুরোধ করবো দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেয়। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ান তবে আমরা কোন রকম বাচঁতে পারব। এ ছাড়া আমারদের আর কোন রাস্তা নেই।
এ ব্যাপারে তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিন বলেন, আমরা সর্বদাই তাদের খোঁজ নিচ্ছি। তাছাড়া তাদের ঘরে ঘরে ত্রাণ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্ট করেছি সরকারি বরাদ্দ এলে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। এবং তাদের থাকার ব্যাপারে কোন সমস্যা হলে তাদের জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলো খোলা আছে। সেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবে।