ভোলার বোরহনাউদ্দিনের সাচড়া ইউনিয়নে প্রায় ২৭ বছরের পুরনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে হাজার হাজার বসতঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লঞ্চঘাটসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় তেঁতুলিয়া নদীর অতি জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধটির বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত মেরামত ও স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো ডিভিশন-১) নির্বাহী প্রকৌশলীর তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালের দিকে ভোলা ইরিগ্রেশন বা ভোলা সেচ প্রকল্পের আওতায় বোরহানউদ্দিন উপজেলার কালিগঙ্গা থেকে লালমোহনের বদনপুর ইউনিয়নের রোজিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। তবে কত টাকা ব্যয়ে এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয় সে বিষয়ে কোনো তথ্য আপতত নেই বলে দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের দেউলা শিবপুর, বাতান বাড়ি দরজা, দরুন খাল, বুড়ি বাড়ির দরজা, চর গঙ্গাপুর হাসানই বাড়ির দরজা, চর গঙ্গাপুর ভায়াল বাড়ির দরজা ও ফকির বাড়ির দরজাসহ ৭টি পয়েন্টে তেঁতুলিয়া নদীর অতি জোয়ারের পানির চাপে ভাঙনের দেখা গিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটিতে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দেউলা শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলম, আবুল কামাল ও আবুল হোসেন জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে তাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়। এরপর প্রায় ২৭ বছর আগে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ হলে বাঁধের পাশে জমি কিনে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়া নদীর অতি জোয়ারের পানির চাপে বাঁধটির বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেওয়ায় তারা চিন্তিত।
মো. জাকীর হোসেন, মো. ফরিদ, মো. সোহাগ, খাদিজা আক্তার ও পারভিন বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা নিশ্চিন্তে বসবাস করে আসলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের বসতবাড়ি নদীতে চলে যাবে। আর অন্যস্থানে গিয়ে নতুন করে জমি কিনে ঘর নির্মাণ করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারা আরও জানান, এই বাঁধটি যদি ভেঙে যায় তাহলে প্রথমে বোরহানউদ্দিনের সাচড়া ও দেউলা ইউনিয়ন এবং লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবে এবং ভাঙনের শিকার হবে। তাই বর্তমান সরকারের কাছে দ্রুত বাঁধটি মেরামত ও সিসি ব্লক দ্বারা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন তারা।
কৃষক মো. সিদ্দিক মিয়া ও জয়নাল আবেদীন জানান, তারা বেড়িবাঁধের আশপাশের কৃষি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ধান, গম, ডাল ও সবজি চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করে আসেছন। কিন্তু বাঁধটি ভেঙে গেছে, এতে তাদের কৃষি জমিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভাঙনের সৃষ্টি হবে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো ডিভিশন-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত না করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি মেরামতের কাজ করা হবে। বাঁধের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য সিসি ব্লক নির্মাণেরও আশ্বাস দেন তিনি।