মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: এক সময় দেশের সর্বত্রই শকুনের দেখা মিলতো। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই ছিল অবাধ বিচরণ। নিয়মিতই দেখা মিলতো নদীর ধারে। শহরের আনাচে-কানাচেও কম দেখা যায়নি। বিশেষ করে যেখানেই মরা প্রাণী থাকতো, সেখানে তাদের দেখা যেতো। প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত এ পাখি এখন প্রায় বিলুপ্ত।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ হবিগঞ্জ কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২১০ শকুন বেঁচে আছে। এর মধ্যে ১১০টি শকুনই হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রেমা বনাঞ্চলে রয়েছে।
বিলুপ্তপ্রায় এসব শকুন সংরক্ষণে কাজ করছে আইইউসিএনসহ একাধিক সংগঠন। এ দিবস উপলক্ষে রেমা বন বিট ও আইইউসিএন’র উদ্যোগে রেমায় বিশেষ আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক হবিগঞ্জ ও বন কর্মকর্তা, আইইউসিএন প্রতিনিধি, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের ব্যবহারের ফলেই মূলত প্রকৃতিকে সুস্থ রাখার গুরুদায়িত্ব পালনকারী এ পাখি এখন অস্তিত্ব সংকটে। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে যে পশু মারা যায় সেগুলো খেলে আর হজম করতে পারে না। দ্রুত পাখিগুলো মারা যায়। এ অবস্থায় শকুন রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এগিয়ে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য। এখানেই
শকুনের বাসস্থল গড়ে তোলা হয়েছে। এতে প্রায় ১১০টি শকুনের বিচরণ রয়েছে। তাদের সংরক্ষণে খাবার হিসেবে নানা সময়ে গরু জবাই করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলা শকুন রক্ষায় ২০১৪ সাল থেকে তারা কাজ করছেন। এ জাতীয় শকুন পুরো পৃথিবীতেই একেবারে কমে গেছে। ৯৯ শতাংশেরও অধিক শকুন পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা শুধু শকুন রক্ষায় কাজ করছে।
তারা জানায়, সরকার দেশে দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল ঘোষণা করেছে। একটি হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বনাঞ্চল এবং অপরটি খুলনার সুন্দরবন। একই সঙ্গে সরকার এ দুটি অঞ্চলের গরুতে কিটোপ্রোফেনজাতীয় ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ওষুধগুলো যদি পশুতে ব্যবহার না হয় এবং পশু স্বাভাবিকভাবে মারা যায়, সেগুলো খেলে শকুন আর মরবে না।
রেমা বনাঞ্চলের বিট কর্মকর্তা বলেন, শকুনকে প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয়। শকুনের যে হজম করার ক্ষমতা রয়েছে তা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। মানুষের জন্য ক্ষতিকর যে জীবাণুগুলো রয়েছে তা খাওয়ার পর অতি সহজেই শকুন হজম করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তাদের প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়। তাতে যেন তাদের কোনো ব্যাঘাত না হয় সে জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। এখানে ১১০ টিরও বেশি শকুন রয়েছে।