রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী : ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রবিবার সকাল থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ বাড়ী মন্দির পরিদর্শন ও হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।’
প্রেমতলী খেতুরিধামসহ বিভিন্ন মন্দির কমিটি ও গোগ্রাম ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসা পরিদর্শকালে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ সব কথা বলেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ীর গোগ্রাম নওয়াতুল ইসলামী কাওমী মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক মাও. মোখতার আলী, গৌরাঙ্গ দেব মন্দিরেী সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘কেউ যদি উপাসনালয়ে, দুর্গাপূজা মণ্ডপে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, বাধা প্রদান করে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না ।
তিনি আরো বলেন,’ আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আগামী মঙ্গলবার মিটিং করবো। সেখানে আমরা ডিআইজি জেলা প্রশাসককদের নির্দেশনা দেব। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সে যেই হোক, আমরা তাকে ছাড় দেবো না। আইনের আওতায় এনে শাস্তি ও বিচার করবো। এছাড়াও যদি কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বা হবে মনে হয় তাহলে স্থানীয় জনগণ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের সম্পৃক্ত করে তাদের পূজা মন্ডল পাহারা দেবে।’ বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ সকলে সমান ভাবে উৎসব পালন করবেন। দেশে কোন বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না।’
পরে ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে স্থানীয় ৪০০ হিন্দু মুসলিম পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ ও মন্দির পরিদর্শন করেন।
এছাড়াও স্থানীয় ইসকন ভবন পরিদর্শন ও গোগ্রাম পূজা মন্ডল পরিদর্শন, স্থানীয় সুধিজনদের সাথে মতবিনিময় ও ১০০ জন দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে । আমরা এমন কোন এই মুহূর্তে কাজ করতে চাই না যেটি নিয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি হোক। সবাইকে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই।
ধর্মীয় উপাসনালয় হামলার প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা গর্হিত কাজ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায় তারা মানবতার শক্রু, ক্রিমিনাল। আমরা ক্রিমিনালদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার করা হবে। এছাড়াও দুর্গাপূজার নিরাপত্তায়
স্থানীয় সাধারণ জনগনের পাশাপাশি মাদ্রাসার ছাত্রদের পূজার সাথে সম্পৃক্ত করে মন্দির পাহারা দেয়া হবে। যেন কোন ধরনের হামলা বা নাশকতা না হয়। মাদ্রাসার ছাত্ররা কোন ধরনের জঙ্গিবাদের সঙ্গে ছিলো না। এটা পূর্বের সরকারের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর হিন্দু মহাসভার হামলার আশঙ্কার খবরে ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক চাই। আমাদের ক্রিকেট দলের উপর ভারতে হামলার খবর শুনছি। যেহেতু বিসিবি আছে, তারা এবিষয়ে করনীয় ঠিক করবে। পট পরিবর্তনের পর কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ীতে যেমন হামলা হয়েছে, তেমনি মুসলমানদের বাড়ীতেও হয়েছে। এটাকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। এ সরকার সকলের সরকার, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। হজ্বের প্যাকেজ মূল্য কমানোর পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হজ্বের প্যাকেজ মূল্য কমানো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হাজিরা যে টাকা দেয় তা থেকে এক পয়সাও আমরা ধর্মমন্ত্রণালয় রাখি না। হাজিদের এক কোটি টাকার আমরা ঔষধ দেই। ৮০ জন ডাক্তার, ২০-৩০ জন নার্স ব্রাদার্স আমরা সাথে রাখি। স্থায়ী চিকিৎসা প্রদান করি। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করি। এছাড়াও সৌদি আরবের সাথে যেসব চুক্তি আছে সেগুলো দিয়ে থাকি। এগুলো হাজিদের কাছে নেই না। এছাড়াও হজ্বের যে মূল খরচ থাকা, খাওয়া, বিমান ভাড়া, এবং সৌদি সরকারকে একটি নির্দিষ্ট খরচ দিতে হয়। তিনি বলেন, এই মাসেই সৌদি হজ্ব মন্ত্রীর সাথে দেখা হবে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি হাজিদের জন্য যে যে খাতে কমানো যায় এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় প্যাকেজ ঘোষণা করতে চাই।