কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি: নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে শাপলা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র লাল লাল বৃত্ত। দূরত্ব কমার সাথে সাথে একসময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহস্র শাপলা। এ যেন শাপলার রাজ্য। মাঝে মাঝেই নজরে পড়বে সাদা বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ই, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলি।
গাজীপুরের কাপসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ শাপলা বিল। পুরো বিলজুড়ে রাজত্ব করছে গোলাপি শাপলার দল। বিলের ফুটন্ত শাপলার শোভা একদিকে যেমন ভ্রমণপিপাসুদের মনের খোরাক জুগিয়ে চলেছে, তেমনি এই শাপলা বেচে আর পর্যটকদের কাছে নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের জন্য। এ শাপলাকে ঘিরেই সেখানে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিলের পানিতে ঘুরতে ঘুরতে কেউ হয়তো দুয়েক গোছা শাপলা তুলে নিচ্ছেন নৌকায়। কেউ আবার দরদাম করে বিলের তাজা মাছ কিনে নিচ্ছেন।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়ানো শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে প্রতিনিয়তই। ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনেই পাখিডাকা ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ শাপলার বিল এলাকা। পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দিচ্ছে। বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। তবে এখানে যে শুধু লাল শাপলা বা প্রকৃতির সবুজ রংয়ের সমারোহই ঘটেছে এমনটাও নয়, এখানে লাল শাপলার মাঝেই দেখা মিলছে সাদা শাপলা, সাদা বক, দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শিকার।
স্থানীয় পাঁচুয়া বাজার ব্যবসায় কমিটির সভাপতি আফতাব উদ্দিন জানান, সাধারণত বর্ষায় খাল-বিল, ডোবায় যখন পানি টইটম্বুর থাকে, তখন জলে ভাসতে থাকে আমাদের চিরচেনা শাপলা-শালুক। শুধু সৌন্দর্যই নয়, সুস্বাদু খাবার হিসেবেও শাপলার বেশ কদর রয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলার নাইঘর, নাগাইশ, শিদলাই ও দুলালপুর পশ্চিম বিলে অপরূপ শোভা ছাড়াচ্ছে অগনিত শাপলা ফুল। দূর দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই বিস্তীর্ণ জলাভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন প্রায় প্রতিদিনই। লোকজন আসলে আমদের ভাল লাগে। কিন্তু অনেকে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে এতে সুন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
শাপলা বিল দেখতে আসা শিক্ষার্থী তম্ময় হাসান বলেন, ফেসবুকে এবং ইউটিউবে লাল শাপলার অনেক ছবি ও ভিডিও দেখেছি। তাই দেখতে চলে আসলাম। খুবই ভালো লেগেছে। এতো শাপলা আগে কখনও এক সাথে দেখিনি। অনেক ছবি তুলেছি। তা দেখে নিশ্চয় আমার বন্ধরাও আসতে চাইবে।
পাঁচুয়া বাজার সংলগ্ন বিলে কথা হয় মাঝি কাজল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আগে এখানে কোন নৌকা ছিল না। দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখার জন্য আমি নৌকার ব্যবস্থা করি। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর থেকে দল বেঁধে লোকজন আসে। তাদের বিল ঘুরিয়ে প্রতিদিন আমার প্রায় ৬-৭শ টাকা আয় হয়।
বিলের পাশেই কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুল আলমের বাড়ি। সে জানান, বিলের জলে ফুটন্ত শাপলার আসল সৌন্দর্যের দেখা মেলে ভোরবেলায়। সূর্য ওঠার পর থেকে ফুটন্ত শাপলাগুলো আস্তে আস্তে মুখ গুটিয়ে নেয়। তাই এই সময়টিতেই শাপলার শোভা দেখতে আসা মানুষের ভিড় থাকে বেশি। বাড়ির পাশে এমন নয়ন জুড়ানো মুদ্ধতা দেখে খুব ভাল লাগে।
শাপলা বিলে পৌঁছাতে গাজীপুর থেকে প্রথমে যেতে হবে কাপাসিয়ায়। কাপাসিয়া থেকে আমরাইদ বাজারে। সেখান থেকে জলপাইতলা হয়ে টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে। চলাচলের জন্য বাস, সিএনজি বা ইজিবাইক রয়েছে।