ঢাকা
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১০:০৬
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে হরিলুট, কয়লা সংকটে পড়তে পারে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: আওয়ামী সরকারের ঋণ নির্ভর মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমানে ১২০০ মেগাওয়াটের ২টি কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদনে থাকলেও কয়লা সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়েছে প্রকল্পটিতে। কক্সবাজারের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কয়লার অভাবে নেমেছে ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াটে। ডলার-সংকটে কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানির খরচ দিতে পারছে না পিডিবি

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২টি কেন্দ্র ২০২৩ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে ২ দফায় চালু হয়। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা আনা হয়। চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন সর্বশেষ কয়লা সরবরাহ দেয় আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। তাদের সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মতো।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে যেন হরিলুট হচ্ছে। একের পর এক সামনে আসছে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ঘিরে দুর্নীতির খবর।বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কয়লা আমদানিতে তিন বছরেই পাঁচ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা নেন প্রকল্পে জড়িত দুর্নীতিবাজ শীর্ষ কর্মকর্তারা। সর্বশেষ পালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কালাম আজাদ।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিপিজিসিবিএলের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৭৭০ কোটি টাকার ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেখা যায়, অবৈধভাবে ১৬টি কাজে ১০৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেরিয়েশন প্রদান, প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের নামে ৬৮ কোটি টাকা, বিটুমিন বা পিচের সড়ক না করে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করে ২৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব স্ক্র্যাপ বিনা নিলামে বিক্রির মাধ্যমে ৫৩ কোটি টাকা, ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্টের নামে ১২ কোটি টাকা, প্রকল্পের ঠিকাদারের লেফটওভার ম্যাটেরিয়াল বিক্রির মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা ছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান মালপত্রের কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তন করে এবং প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রকল্পে নিম্নমানের মালপত্র সরবরাহ করা হয়।

এদিকে, নিয়ম অনুযায়ী সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কয়লা কেনার কথা থাকলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কয়লা কেনা আটকে গেছে। আদালত পর্যন্ত গড়ানো বিষয়টি বর্তমানে রায়ের অপেক্ষায় আপিল বিভাগে ঝুলে আছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩ বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে বেআইনি সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করে। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাই মাসে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, আইনগত বিষয়গুলো তাদের ঢাকা হেড অফিস থেকে দেখা হচ্ছে। তাই সেই বিষয়ে তারা জানেন না। তবে কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই বলে তারা জানান।

এদিকে প্রকল্পের ভেতর থেকে কোটি কোটি টাকা দামের মূল্যবান বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত ৩১ আগস্ট প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুজ্জামানের নির্দেশে জাহাজে করে সরিয়ে নেয়ার সময় ১৫ কোটি টাকার তামার ক্যাবল জব্দ করা হয়। আটক করা হয় এর সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে। এই ঘটনায় প্রকল্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও মীর্জানুল ইসলাম বলেন, শুধু ৩১ আগস্ট নয়, এর আগেও পসকোর নাম ব্যবহার করে দুই কন্টেইনার মালামাল বের করেছিলো প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তরাও রাতে প্রকল্পে ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি তাদের।

২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৬ ইউনিট বিদ্যুৎ। কয়লা আমদানি জটিলতা দ্রুত শেষ না হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে প্রকল্পটির। এক হাজার দুইশ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশে যতগুলো কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল।

এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পটি নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১৪ সালে। এর কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুতে মাতারবাড়ী প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ২০২১ সালে এ প্রকল্প সংশোধন করে সময় বৃদ্ধি করা হয়। তখন ব্যয় বাড়ে আরও ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram