এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: প্রভাষক আশরাফ আলি মন্ডলের ছোট ছেলে আল মাইহিয়ান প্রান্তিক (২৪)। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চাকুলমুয়া গ্রামের এই সাহসী তরুণের নাম হয়তো আমরা ভুলতে বসেছি, কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার সংগ্রামের গল্প আমাদের মনে গেঁথে গেছে।
শিক্ষার সুবিধার্থে পরিবারসহ বগুড়া শহরে বসবাস করছিল আল-মাইহিয়ান। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ম্যানেজম্যান্টে অনার্সের ১ম বর্ষের ছাত্র সে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। সেই সময়, ১৫ই জুলাই থেকে বগুড়ার সাতমাথায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয় তিন শতাধিক সাহসী তরুণ। তাদের মধ্যে আল-মাইহিয়ানও ছিলেন একজন।
আন্দোলনের মাত্রা যখন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন ছাত্রলীগ ও পুলিশের আচরণ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে ওঠছিল। ১৮ই জুলাই সকাল ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায় তিনশো ছাত্রদের অবস্থানকালে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে। বেপরোয়া পুলিশের আক্রমণে ছাত্ররা যখন ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করে, তখন আল-মাইহিয়ানের মাথায়, ঘাড়ের ডান পাশে ও ডান চোখে রাবার গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবী যেন অন্ধকারে ঢেকে যায় তার জন্য। গুরুতর আঘাত পেয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের অপারেশন থিয়েটারে। আজও তার ডান চোখে পুরোপুরি দেখতে পায় না; চশমার সাহায্য ছাড়া তার পৃথিবী ঝাপসা। আল মাইহিয়ান মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু তার জীবন আর আগের মতো স্বাভাবিক নেই। চিকিৎসার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, অবশেষে গত ৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার তিনি নিজ গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। তবু, তার মনোবল অটুট। প্রতিটি দিনই তার জন্য এক নতুন সংগ্রামের দিন। এক চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হলেও তার মনের চোখে এখনও জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন। তার সেই বেদনাদায়ক মুহূর্ত, চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু, অস্পষ্ট কণ্ঠে উচ্চারিত কথাগুলো আমাদের হৃদয়কে আজও নাড়া দেয়। তার সাহসী পদক্ষেপ, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, রক্তের প্রতিটি বিন্দু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে হলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা আন-মাইহিয়ান অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ১৫ জুলাই থেকে আমরা সংগ্রাম শুরু করেছিলাম, আর ৫ আগস্টে যেন আমাদের দেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে। এই লড়াই ছিল ন্যায়ের জন্য, মেধার স্বীকৃতির জন্য। আমরা দেখিয়েছি অধিকার কোনো দান নয়, এটি লড়াই করে আদায় করতে হয়। আমাদের এই নতুন স্বাধীনতার সংগ্রাম আমাদের সাহসী পদক্ষেপেরই জয়।