জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: কক্সবাজার সৈকতে হাঁটছেন এক নারী। পেছন থেকে ছুটে গিয়ে তাকে থামান এক যুবক। যুবকের হাতে ছিল লাঠি। লাঠির ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করতে বলা হয়। পুরো বিষয়টি মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও করতে থাকা আরেক ভুক্তভোগী নারীর মুখের মাস্ক টেনে খুলে ফেলেন যুবক। এরপর রোষানল থেকে বাঁচতে ওই নারী কান ধরতে বাধ্য হন।
এ সময় চারপাশে মানুষের ভিড় জমে যায়। ওই সময় অনেকে অশালীন গালিগালাজ করেন। কেউ কেউ কান ধরে ওঠবসের গণনাও করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও করে পরে ছেড়ে দেয়া হয় ফেসবুকে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ঘটনাটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের।
এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ফেসবুকে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। কেউ কেউ ওই নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে এমন শাস্তি প্রযোজ্য বলে সাফাই গাইতে চেষ্টা করলেও অধিকাংশ মানুষ এই বিকৃত ও বেআইনি ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত লাঠি হাতে থাকা যে যুবকের মাধ্যমে, তাকেও হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ। ওই যুবকের নাম ফারুকুল ইসলাম। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার চুনতি বড় হাতিয়া এলাকায়।
এ ঘটনায় আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভিকটিক আরোহী ইসলাম বাদী হয়ে ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্রসহ ৫/৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নম্বর কক্সবাজার সদর থানা-৪০, তাং-১৪/০৯/২৪। বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, শনিবার দিবাগত রাতে ফারুকুল ইসলামকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার সদর থানার মামলা নং-৪০, তাং-১৪/০৯/২৪
এ ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষকে ব্যবসায়ী ও কয়েকজন ছাত্র মিলে সৈকত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে ও পর্যটকদের নানাভাবে বিরক্ত করছে এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
যদিও আমরা এ ব্যাপারে আরও খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে এভাবে আইন হাতে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারত। পুলিশকে না জানিয়ে এমন ঘটনা আইনগত অপরাধ। বিষয়টি জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্র বা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে এখন অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বা আইনপ্রয়োগকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন, সৈকতে নারীকে পেটানো বা হেনস্থা করা যুবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নয়। যদি এমন অপরাধের সঙ্গে আমাদের কেউও যদি জড়িত থাকে, তাহলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন।
হোটেল মোটেল জোনের নেতা আব্দুর রহমান বলেছেন, 'কক্সবাজার পর্যটনের শহর। এখানে মানুষ আসে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য। এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটি আমাদের পর্যটন শিল্পেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
এদিকে এ ঘটনাটি নিয়ে জনৈক কাদের উদ্দিন শিশিরের ফেইসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের বেলা একজন নারী এক দল লোকের ভিড়ের মধ্যে কান ধরে উঠবস করছেন। পাশে থেকে নানান জন্য তাকে গালমন্দ করছেন। ভিডিওটিতে শুধু একজন ব্যক্তিকে দেখা যায় হাতে কাঠের লম্বা টুকরা দিয়ে উঠবস করা নারীকে একাধিকবার আঘাতও করেছেন। ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমাদের সমাজে যৌন কাজকে যেভাবে দেখা হয় এবং আচরণ করা হয় তা পরিবর্তন করার জন্য আমরা নিজেদের এবং অন্যদের শিক্ষিত করার জন্য কাজ করতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজের মানসিকতার সংস্কার হবে।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে চারদিকে। অনেকে বলছেন, কক্সবাজার কেউ হজ করতে আসে না। এটি পর্যটন এলাকা। এভাবে পর্যটক হেনস্তার শিকার হলে প্রভাব পড়বে পর্যটন শিল্পের উপর।