যশোর প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা আসনের বহুল আলোচিত সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার প্রায় তিনশ’ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্ষমতার জোরে তিনি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে জোর করে সেইসব জমি দখল এবং লিখে নেন। ভুক্তভোগীরা জানান, তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। যশোরের শার্শা উপজেলা সদরে রয়েছে আফিল জুট উইভিং মিলস লিমিটেড। যার মালিক সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। মোট ১১০ বিঘা জমির উপরে গড়ে তোলা এই মিলটির প্রায় ৫০ বিঘা জমিই জোর করে দখল করে নেন তিনি।
শার্শা উপজেলার চটকাপোতা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান খান বলেন, আমি একজন কৃষকের সন্তান। এই মিলের মধ্যে আমার সাড়ে চার বিঘা জমি রয়েছে। মিল তৈরির সময় প্রধান গেটের মুখে থাকা আমার জমি শেখ আফিল উদ্দিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর করে দখল করে নেন।
চটকাপোতা গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আবু বক্করের ছেলে মো. ইকবাল বলেন, সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার ১৬৫ শতক জমি (৫ বিঘা) জোর করে দখলে নেন। শুধু আমি একা নই, এখানকার অনেক হিন্দু-মুসলিমের জমিও তিনি জোর করে দখল করেন। এখন দেশে তার সেই ক্ষমতা নেই, আমরা এই দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে, শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের হরিণাপোতা মৌজায় সাবেক এমপি শেখ আফিলের প্রায় ২২৫ বিঘার একটি ঘের রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩০ বিঘা জমি রেকর্ডিয় সম্পত্তি, বাকি অংশ জোর করে দখল করা এবং নামমাত্র মূল্যে কেনা।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি খাস জমিতে কোনো স্থাপনা কিংবা ঘের করার অনুমতি না থাকলেও শেখ আফিল উদ্দিন সেগুলো থোড়াই কেয়ার করেছেন।
চটকাপোতা গ্রামের মোকাররম হোসেনের ছেলে আতাউর রহমান অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, হরিণাপোতা মৌজায় আমাদের একটা ভেড়িবাঁধ ছিল। চাষাবাদ করে সংসার চালাতাম। সেখানে আমাদের ৯ একর রেকর্ডিয় সম্পত্তি এবং ২৫ বিঘা জমি (এনিমি) কেনা ছিল। মোট ৫২ বিঘা জমির সবটুকুই শেখ আফিল উদ্দিন প্রথমে জোর করে দখল করেন। এরপর নামমাত্র মূল্যে লিখে নেন। যার খতিয়ান নম্বর ১৯৫, হরিণাপোতা মৌজা, জেএল নম্বর ৫৫।
নাভারণ এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম বাবু বলেন, সোনামুখি বিলে প্রায় আড়াইশ’ বিঘা জমি ছিল আমাদের পরিবারের। এরমধ্যে ৫০ বিঘা ক্রয়কৃত। শেখ আফিল উদ্দিন আমাদের সেই ৫০ বিঘা জমির ৩০ বিঘাই দখল করে সেখানে ঘের করেন। যদিও আইন রয়েছে, খাস খতিয়ানের জমিতে ঘর বা ঘের কিছুই করা যাবে না। সেখানে অনাথ-অসহায় মানুষ চাষবাস করে খাবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শার নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. কাজী নাজিব হাসান বলেন, দুইদিন হলো আমি এখানে যোগদান করেছি। এরমধ্যে কেউ এসব বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যোগাযোগ করা হলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন বলেন, সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, আমরা তা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত, শেখ আফিল উদ্দিন এমপি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে গোটা শার্শায় সোনা চোরাচালান, সীমান্তে গরুর খাটাল ও হাট নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হত্যা, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট বিকেলে তার জুট মিলে ডেকে এনে তৎকালীন শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে বেদম মারপিট করেন।
পাড়ুইঘুপি গ্রামে আব্দুল হামিদ নামে লক্ষণপুর ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্যকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে ১৬জনকে আসামি করা হয়, তারা শেখ আফিলের ক্যাডার ছিলেন। সেকারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে ডেনে এনে ব্যাপক মারধর করেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি অপকর্মের দায়ে আদালত ১৮ মন্ত্রী ও ৮ জন সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। শার্শা-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের নাম রয়েছে সেই তালিকায়। ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।