শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: কুমিল্লায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার। ভোক্তাদের নিকট অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা বা এভাবে পকেট কাটছে একটি চক্র। খুচরা ব্যবসায়ী ও ডিলার বাড়তি দামে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে এমন হচ্ছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত ২ সেপ্টেম্বর ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪২১ টাকা। গত আগস্ট মাসের তুলনায় ৪৪ টাকা দাম বৃদ্ধি করা হয়। তবে খুচরা পর্যায়ে ১ হাজার ৪২১ টাকা দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার।
গ্যাসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতিটি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে গ্যাস বিক্রিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরী থেকে শুরু করে গ্রামপর্যায়ে সব ধরনের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। মুদি দোকান, লন্ড্রি দোকান, তেলের দোকান, চায়ের দোকানের সামনে রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও জানে না সরকারি নির্ধারিত দাম কত।
এসব দোকানি জানান, ডিলারদের কাছ থেকে তারা যে দামে কেনেন, তার থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। তবে খুচরা পর্যায়ে কোনো ব্যবসায়ী তাদের সিলিন্ডার ক্রয়ের রসিদ দেখাতে পারেননি। শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে এসব সিলিন্ডারের দাম আরও বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, শহর থেকে ভাড়া দিয়ে গ্রামে আনতে হয়। এ জন্য আরেকটু দাম বেড়ে যায়।
ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় প্রতি মাসে ৬০ হাজারের বেশি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি সিলিন্ডারে একশ টাকা দাম বেশি নিলে গ্রাহকের পকেট থেকে প্রতি মাসে বাড়তি যায় ৬০ লাখ টাকা। মূলত এই ৬০ লাখ টাকা বাড়তি লাভ করে এলপিজি গ্যাসের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
তাদের দাবি, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এভাবে পকেট থেকে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার সোহেল বলেন, আমি মুদি ব্যবসার পাশাপাশি ১২ কেজি ওজনের গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করি। কিন্তু এ মাসে নতুন করে আর গ্যাস তুলিনি। কারণ সরকার যে দাম নিধারণ করে দেয়, সেই দামে আমরা কিনতে পারি না। এ নিয়ে অনেক ক্রেতার সঙ্গে ঝগড়া হয়। আবার মাসে কয়েকবার দাম বৃদ্ধি করে ডিলার। ফলে কিছুদিন বিক্রি বন্ধ রাখি।
সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা মাদরাসার শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রতি মাসে আমার একটি করে সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। নাম না জানা বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডারে ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা বেশি নেয়।
বাড়তি দামের কথা জানতে চাইলে দোকানিরা বলেন, আমি যেমন কিনি তেমন বিক্রি করি। ডিলারের কাছে যান। সরকারের উচিত সিলিন্ডারের গায়ে দাম লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটি না করলে আমরা এভাবে ঠকতেই থাকব প্রতিনিয়ত।
বিশ্বরোড এলাকার বাসিন্দা আরিফ বলেন, কোনো জিনিসই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। তার মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাস একটি। এখন সরকার ঠিকমতো এ বিষয়টিতে নজরদারি করলে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসত। সরাসরি ডিলারের কাছ থেকে কিনলেও দাম বেশি রাখবে। বেশি দামের বিষয়টি জানতে গেলে নানা যুক্তি দেখায় ডিলাররা।
বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা জানালেন, সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে ডিলারদের কাছ থেকে তাদের কিনতে হয়।
বিশ্বরোড সরকার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমান আবদুলল্লাহ বলেন, সরকার দাম নির্ধারিত করে দেওয়ার পর আমাদের কোম্পানি তিনবার দাম বৃদ্ধি করেছে। এখন কোম্পানি থেকে দাম বৃদ্ধি করলে মার্কেটে সেটির দাম বাড়বে। এ জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দামের পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে প্রতি মাসে। কয়েক মাস ধরে এভাবেই চলছে এলপিজি গ্যাসের বাজার। তবে আমরা কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দামে গ্যাস বিক্রির চেষ্টা করি, সরকারের নির্ধারিত মূল্যে সম্ভবনা।
ওমেরা, ডেল্টা, বসুন্ধরাসহ কয়েকটি এলপিজি গ্যাসের ডিলার মনিমুক্তা পাল বলেন, আমাদের জেলায় গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এসব কারণে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না।
কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, জেলায় কয়েক কোম্পানির এলপিজির সংকট রয়েছে। এসব কোম্পানির সিলিন্ডারগুলো একটু বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। যেসব এলপিজি কোম্পানির সিলিন্ডারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, যেগুলো যাতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয় সে বিষয়ে নজরদারি করছি।