আটঘরিয়া(পাবনা)প্রতিনিধি: পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের মাঠজুড়ে চোখে পড়বে শিমের ক্ষেত। শিমের সবুজ লতা-পাতার মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারো নজর কাড়বে। এবার আগাম ‘রূপবান’ ও ‘অটো’ শিমে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন।
কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর হতে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা বর্ষণে কৃষকের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শত শত বিঘা জমির শিমের ক্ষেত এখন পানির নিচে।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১৫৫৩ হেক্টর জমিতে শিম চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে।
আগাম জাতের শিম বাজার উঠতে শুরু করেছে। শীতকালীন শিমসহ অন্যান্য কপি, গাজড়, মূলা সবজি চাষের জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আটঘরিয়ায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষীরা।
রাঘবপুর গ্রামের শিমচাষি জিল্লু, লাল,মান্নান, চাঁদ আলী, আকু,সাহেদ আলী বলেন, আমাদের এলাকার জমির শিম গাছের গোড়া পুরোটাই এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। শিমের জমি চাষ করতে প্রত্যেকের প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবেমাত্র গাছে শিম আসা শুরু হয়েছে। ভালো দামে এক মণের মতো বিক্রি করেছি। এ অবস্থায় শিমতে নষ্ট হয়ে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।
রাবঘপুর গ্রামের শিম চাষি আবু সাঈদ জানান, বেশিরভাগ কৃষি জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ করা হয়েছে। শিমের ফলন শুরু হয়েছে। হঠাৎ চারদিনের টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ শিমের জমি তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে শিম গাছের গোড়া পানির নিচে রয়েছে। তিন দিনের বেশী পানির নিচে থাকলে সাধারণত শিম গাছ মরে যায়। বৃষ্টির পানি এখনো শিম ক্ষেত জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে অধিকাংশ শিম গাছ পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কৃষকরা এবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাজপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, এই ইউনিয়নের গ্রামের কৃষি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানকার শিম ক্ষেতগুলো এখনো পানির নিচে। শুধু রাঘবপুর, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর, দরবেশপুর, পাড়ামোহন, দরগাহ বাজার গোয়ালবাথান সহ আশপাশের প্রতিটি গ্রামেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কমলা নদী ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলেই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে এখানকার শত শত হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ বলেন, মাজপাড়া ইউনিয়ন শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এই ইউনিয়নে কৃষকেরা তাদের জমিতে প্রতি বছর শিমের আবাদ হয়। এবার আগাম জাতের শিমের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। প্রবল বর্ষণে শিমের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না রাখায় জলাবদ্ধতার কারণে শিম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাধারণত তিন থেকে চার দিন শিম গাছের গোড়া পানির নিচে থাকলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
গাছের গোড়া থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর দ্রুত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নানান পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।