যশোর প্রতিনিধি: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুর কবির রিজভী বলেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে না; তারা ভালোবাসে মহামূল্যবান হিরা কহিনুর খ্যাত পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে। ছাত্র-জনতার মহাবিপ্লবে হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোকে এখনো মেনে নিতে পারছে না তার প্রভু রাষ্ট্র ভারত। তাই তারা এই দেশকে ও এই দেশের সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে নানা ভাবে চক্রান্ত করছে। সকল দেশবাসীকে এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র রুখে নিতে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, গণহত্যাকারী পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার ল্যান্সপ্যান্সাররা এখনো দেশকে অস্থিতীশীল করতে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছে। জুলাই বিপ্লবের পর ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও পতিত স্বৈরাচারের দোসর ওই আওয়ামী ফ্যাসিষ্টরা দেশে প্রতিবিপ্লবের ব্যর্থ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবিলা করতে দেশ প্রেমিক জিয়ার সৈনিকদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই। যে ভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করে দেশকে ফ্যাসিষ্ট মুক্ত করেছে সেই ভাবে আমাদের সকলকে তারুন্যের অহংকার তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে কাজ করতে হবে। কোন ভাবেই এই ছাত্র জনতার সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কোন কারনে যদি এই সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। তাই সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকার নির্বাচনী রোড মার্চ ঘোষণা করে দেশকে গণতন্ত্রের ট্র্যাকে তুলে দেবেন।
রোববার বিকালে যশোর শহরের চৌরাস্তায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রিজভী এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা গোটা বিচারালয়কে কেঙ্গারু কোর্টে পরিণত করেছে। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে তার ইচ্ছা ও পছন্দ মতো লোককে বিচারকের আসনে বসিয়ে যা খুশি তাই করেছে। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মনগড়া রায় দিয়ে তিনি তাদেরকে সম্মানহানীর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে? আজ শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ হারানোর ভয়ে দেশ ত্যাগ করে তার প্রভু রাষ্ট্র ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর এই কারনে ভারত ফের এই দেশকে ও দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি ভারতের মোদি সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, মনে রাখবেন আমরা ছোট দেশ নয়; আমরা ১৮ কোটি জনগণের রাষ্ট্র। এটাই আমাদের শক্তি।
বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের পতন ও হাসিনা এবং তার এমপি মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও প্রশাসনের সর্বত্র তার রেখে যাওয়া ফ্যাসিষ্টরা জায়গা দখল করে বসে আছে। এই সব আওয়ামী পেতাত্বারা সুযোগ পেলেই তাদের কালো থাবা এই জাতির স্কন্ধে বসিয়ে দেশ ও দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে তুলবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এই আলী ইমাম মজুমদার বিগত হাসিনা সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন। তিনি ডিসি ফিটলিষ্ট তৈরীর জন্য নতুন একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মাঠ প্রশাসনে কমপক্ষে ১ বছর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করলে কেউ ডিসি হিসেবে পদোন্নতি পাবেন না। একই ভাবে তিনি সচিব পদে পদোন্নতির শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে এক বছর দায়িত্বপালন কে গুরুত্ব দিচ্ছে। আসলে এই আলী ইমাম মজুমদার কে তা আপনারা সকলেই জানেন। এই আলী ইমাম মজুমদার এখন এসব ফন্দি ফিকিরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া পেতাত্বাদের প্রশাসনে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। কারগ গত ১৫ বছরে ভিন্ন মতের কোন অফিসারকে এসব পদে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। যারাই এসব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবই হাসিনার মতের ও পথের লোক। তাই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে হলে এবং মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রশাসন থেকে শেখ হাসিনার এই পেতাত্বাদের বের করে দিতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, বিএনপি কখনো ক্ষমতার চেয়ারে যাওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেনি। গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি ও তার নেতা তারেক রহমান এই দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছেন। ৩৬ শে জুলাই ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের বাক স্বাধীনতা বা মুক্ত মনে কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করতে হবে। আর যতদিন এই ভোটাধিকারের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী না হচ্ছে ততোদিন বিএনপি দেশের রাজপথে থাকবে। জনগণকে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তুলবে। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে রাজপথে থাকার পরামর্শ দেন। একই সাথে গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত দিদার হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আটক ও বিচারের দাবি জানান এই স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা।
গোপালগঞ্জে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদার হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। জনসভায় বক্তৃতা করেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুর হক রানা, মোস্তফা আমির ফয়সল, গিলবার্ট বিশ্বাস প্রমুখ।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা এ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, এ্যাড. মোহাম্মদ ইসহক, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান খান,এ্যাড. জাফর সাদিক, আব্দুস সালাম আজাদ, গোলাম রেজা দুলু, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহম্মেদ, মঞ্জুরুল হক খোকনসহ জেলা মহিলা দল, জেলা যুবদল, জেলা ছাত্রদলসহ বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নের হাজার হাজার নেতাকর্মী।