সীমান্ত হেলাল, মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। মেঘনায় সামান্য জোয়ার হলেই প্লাবিত হচ্ছে চরগুলো। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় হলে যে কোন সময় ঘটে যেতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এবং জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে।
এছাড়া মনপুরা দ্বীপ রক্ষায় চারদিকে ৭৭.৫৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কাগজপত্রে থাকলেও মেঘনা নদীর প্রবল গ্রাসে এখন অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সামান্য জোয়ারেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মনপুরার উত্তরে বিচ্ছিন্ন কলাতলির চরে বেড়ীবাঁধ না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঝূকি নিয়ে বসবাস করছে। মেঘনার জোয়ার সামান্য বৃদ্ধি পেলেই পুরো চর প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়ছে। এছাড়াও কাজীর চর, ঢাল চরে নেই কোন বেড়িবাঁধ। এই দুই চরে বসবাস করছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ।
এদিকে পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন শহীদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল, পূর্বে বদনার চর, লালচরে নেই কোন বেড়ীবাঁধ। তাছাড়া দক্ষিণে সাগর মোহনায় চর নিজামে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছে।
এসব চরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। সামান্য জোয়ারেই প্লাবিত হয়ে পানিবন্ধি হয়ে পড়ছে এসব চরের বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার কলাতলি চরের বাসিন্দা মিজান, সালাম, আল আমীন, সাদ্দাম জানান, এই চরটি নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদে রুপান্তরিত হলেও এখন পর্যন্ত উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। চারদিকে কোনপ্রকার বেড়িবাঁধ না থাকায় চরটি সামান্য জোয়ার হলেই ডুবে যায়। এতে চরের বাসিন্দারা বেশিরভাগ সময়ই পানিবন্ধি থাকতে হয়।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত চর নিজাম দ্বীপের বাসিন্দা কালাম মাঝি, সুমন, ফয়সাল, কাদের জানান, চরটি সাগরের মোহনায় হওয়ায় কোন প্রকার বেড়ীবাঁধ না থাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ সবসময় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
এছাড়াও মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন শহীদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল ও বদনারচরে কোন প্রকার বেড়ীবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় হাজার হাজার মানুষ সবসময় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব চরাঞ্চলে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর গোর্কি নামের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে আঘাত হেনেছিলো। এতে বেড়ীবাঁধ বা সাইক্লোন সেন্টার না থাকার কারনে মনপুরা উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। এবং সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছিলো। তারা দুঃসহ সেই রাতের স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি। সেই থেকে সাগরে কোন লঘুচাপ বা নিম্নচাপের খবর শুনলেই তারা ভয়ে আঁতকে ওঠেন।১৯৭০ সালের মহাদূর্যোগের পরও উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-০২ এর নির্বাহী প্রকৌশলি মোঃ আসফাউদদৌলা জানান, মনপুরার মূল ভূ খন্ডে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধগুলো সংস্কারের ব্যাপারে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার হলেই বিচ্ছিন্ন চরে সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে বেড়ীবাঁধের পরিকল্পনা করা হবে।