রাজিব প্রধান, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে, স্থানীয় বিএনপির নেতা তার দলবল নিয়ে বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেধে পিটিয়ে, গায়ে গরম পানি ঢেলে ইসরাফিল নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বজনরা।
নিহত যুবক নির্মাণ শ্রমিক মোঃ ইসরাফিল (২৪) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মোঃ নাসির উদ্দিনের ছেলে।
গত বৃহস্পতিবার ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইসরাফিলের মৃত্যু হয়।
নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, বসতঘরে ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শৈলাট পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টা পেটায় অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে গরম পানি নিয়ে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমড়ের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁসকা পড়ে যায়। এসময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল, তার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতো।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ির বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিল ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় বেপারী বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চায়। পরে তাকে নিয়ে যায় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়েই তার হাত-পা রঁশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।
তারপর ইসরাফিলের উপর চলে ব্যাটারী চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমড়ের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। গরম পানিতে যুবকের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোঁসকা পড়ে যায়। এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে মারতে চোর পেটানোর উৎসব শুরু করে, করতে থাকে উল্লাস। পুরো ঘটনায় নিহতের কোনো স্বজনকে কাছে যেতে দেয়া হয়নি। তারা কাছে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মো. ইসরাফিলের বাবা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন (৫০) শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। সে গাজীপুর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুল হাসান লিটনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ইসরাফিলের ওপর ওই নির্যাতন চালান।
পরিবারের প্রশ্ন, কেন পুলিশ ১৩ দিন পর যখন মৃত্যু হলো তখন মামলা নিলো আগে কেনো নিলো না,,,,ইসরাফিল সুষ্ঠু বিচার পেলো কিন্তু মৃত্যুর আগে পেলো না,,৷