শেখ দীন মাহমুদ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর বাজার ও তীরবর্তী জেলেপল্লীসহ তাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। চরম হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (সিআরএমআইডিপি) প্রকল্পের ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত গ্রামীণ মার্কেটের বহুতল ভবন, মনজিদসহ একাধিক স্থাপনা। ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে পাউবোর বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এর আগে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পাউবোর জরুরী ভিত্তিতে ১১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২০ মিটারের জিও ব্যাগের বাঁধটি মাত্র ১৫ দিনেই ধ্বসে পড়েছে। ফলে ভাঙ্গন প্রসারত বৃদ্ধি পেয়ে ফের ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে কাশিমনগর হাচ-বাজার, মসজিদ, গ্রামীণ মার্কেট, মসজিদসহ বিস্তির্ণ এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা ও জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে পল্লী বিদ্যুতের একাধিক পিলার নদীর মধ্যে পড়ে যাওয়ায় তা উঠিয়ে নতুন করে মার্কেট লাগোয়া জমিতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলেরও আগে প্রতিষ্ঠিত পদ্মার এপারের সবচেয়ে বড় গরু-ছাগলের হাট-বাজার কাশিমনগর। প্রাচীণ জনপদের এ হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে গড়ে ওঠে গ্রামীণ কাাঁচা বাজার, মসজিদ, কোম্পানি ঘর, জনবসতির পাশাপাশি নানা স্থাপনা। সর্বশেষ সরকার এ জনপদের গুরুত্ব যাচাই করে এ বাজারেই বরাদ্দ দেয় ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (সি আর এম আই ডিপি) প্রকল্পের ৪ তলা ফাউন্ডেশনের দ্বিতল বিশিষ্ঠ গ্রামীণ মার্কেট। ইতোমধ্যে ভবনটি নির্মান সম্পন্ন হলেও তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরাদ্দ ও চালু করতে পারেনি। এরই মধ্যে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারের মেগা প্রকল্পের এ গ্রামীণ মার্কেটসহ কাশিমনগর বাজার, মসজিদ, জেলে পল্লীসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
পাউবো সূত্র জানায়, এর আগে গত বছর গ্রামীণ মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় ভাঙ্গনের মুখে বাপাউবোর জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১১লক্ষ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে মাত্র ১৫ দিন আগে জিও ব্যাগ দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ করা হয়। তবে অপরিকল্পিতভাবে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে নির্মিত বাঁধটি মাত্র ক’দিনের ব্যাবধানেই পানি ও উপরের মাটির চাপে ধ্বসে পড়ে। এসময় পাইলিংয়ের টানা (সরু তার) দিয়ে বাঁধা খুঁটাগুলি উপড়ে মাটিসহ জিও ব্যাগ নিয়ে পাইলিংটি নদীর পানিতে হেলে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, গবাদি পশুর হাটের ইজারা নিয়ে ইজারাদার সেখানে গর্ত করে নদীতে কার্গো ঢুকিয়ে বালু উত্তোলন ব্যবসার জন্য ভাড়া দিয়েছে। প্রতিদিন ব্যবসাযীরা বাঁশ উঠা-নামা করানোয় সেসব এলাকায় দ্রুত ভাঙ্গন পরিধি বেড়ে গেচে। বর্তমানে নদীতে জোয়ারের পানির প্রবল চাপে যেকোন সময় নতুন ভবন (মার্কেট), মসজিদ, বাজার চাঁদনীসহ বিস্তির্ণ এলাকা ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে চরমভাবে আশংকা করা হচ্ছে।
বাপাউবোর অর্থায়নে বাঁধগুলি নির্মাণের আগে মূলত প্রি-ওয়ার্কের সময় প্রকল্পে পানির মধ্যেই লুটপাটের আয়োজন করা হয় বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। এরপর ঠিকাদারদের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরষ্পর যোগসাজসে যেনতেন ভাবে বাঁধটি নির্মাণ করে দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নেয়ায় এবং দীর্ঘ দিনেও বাঁধের এই এলাকায় তদারকি না থাকায় এর জন্য দায়ী বলেও মনে করেন তারা।
এ ব্যাপারে বাপাউবোর পাইকগাছা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মোতাবেল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি নতুন আসছেন বিষযটি তার জানা নেই। এমনটি হলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।