উত্তম গোলদার, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ‘বাবারে আমার এক সময় সবই ছিলো। ছিলো স্বামী-সন্তানসহ ছোট্ট একটি সংসার। সেই রঙিন সময়ে কথা মনে পড়লে দু’চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ে। স্বামী দিনমজুর হলেও ভালোই চলত সংসার। বয়সের ভারে চোখেও ঠিকমত দেখি না। ভোটার আইডিটাও হারিয়ে ফেলেছি। ’
এমন কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিধবা অজুফা বেগম(৭০)। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের একটি ভাঙ্গা ঘরে তাঁর বসবাস। স্বামী গোঞ্জে আলী মারা গেছে বহু বছর আগে। স্বামী কবে মারা গেছেন তা তিনি বলতেও পারেন না। দুই সন্তান থেকেই নেই। মা'কে ফেলে রেখে তারা বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পেতেছেন। এখন ভিক্ষায় চলে অজুফার জীবন। উপজেলার সুবিদখালী বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় তাকে ভিক্ষা করতে।
তাঁর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কি করবেন আর মোর কথা হুইন্যা’। একেবারেই দরিদ্র পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। স্বামী মারা যাওয়ার পরে ছোট্ট দুই পুত্র সন্তান বড় হওয়ার পরে আমাকে ছেড়ে তারা চলে গেছে। উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় অজুফার বেগমের ঘাড়ে ওঠে সংসারের বোঝা। শুরু হয় পরিশ্রম ও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কাজ করানোর সুবাদে সবাই আদর-স্নেহও করতো। পরিশ্রমে অজুফা দিন দিন দুর্বল হতে থাকে। এভাবে কাটিয়ে দেয় বহু বছর।
তিনি আরো বলেন, স্বামীর অসহায়ের সংসার ও আমার বাবার বাড়ি অনেক সম্পত্তি ছিলো। তা বিক্রি করে আমার স্বামী এ সংসার চালাতো। জমি বিক্রি করতে বাঁধা দিলেই চলতো অমানুষিক নির্যাতন। এখনো আমার শরীরে সে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব, ভিক্ষা করে চলতে হয়। এই বৃদ্ধ বয়সে কে খবর নিবে আমার।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশেই বিধবা অজুফার বসতঘর। অথচ তার কপালে কোন ঘর কিংবা সাহায্যে জোটেনি। তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্তানরা মা'কে ফেলে রেখে চলে যায়। এখন এই বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে চলতে হচ্ছে। হয়তো অজুফার টাকা ছিলোনা বলেই সে ঘর বা কোন সাহায্যে পায়নি। বিধবা অজুফার বেগমের একটা ঘরের বা কয়েক খানা টিনের প্রয়োজন। স্থায়ী একটি আবাসনের ব্যবস্থা হলে শেষ সময়টা ভালো ভাবে কাটত। জীবনের শেষ বেলায় এসে বিধবা তাঁর হবে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই এমনটাই দাবী তাঁর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, বিধবা অজুফার বেগমের বিষয়টা আমাদের জানা ছিল না। তার ভোটার কার্ড হারিয়ে ফেলেছে। কোন কিছু সাহায্যে দিতে হলে ভোটার আইডি প্রয়োজন। তবুও অজুফা বেগমের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।