আব্দুল আলীম নোবেল, রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: কক্সবাজার শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার রাজারকুল বনাঞ্চল। তৎকালিন সময়ে জলবায়ু তহবিলের প্রায় ৪ কোটি টাকায় বনাঞ্চলের ৬৫ একর জায়গায় ২০১৩ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন (উদ্ভিদ উদ্যান)। শুরুর কয়েক বছর দর্শনার্থীদের পদচারণে উদ্যানটি মুখর থাকলেও কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে ঠেকেছে এটি। পুরো উদ্যান ঝোপজঙ্গলে ভরে উঠেছে। ফুলের বাগান, শৌচাগার, বসার ঘর, পানি সরবরাহের লাইন, স্বচ্ছ জলের হ্রদ, কাঠের সেতুসহ নানা অবকাঠামো অযত্ন–অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। উদ্যানের ভেতরে থাকা বৈলাম, বাটনা, গর্জন, আম, জাম, কড়ই, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও উজাড় হচ্ছে। শুরুতে তারা এক হাজার প্রজাতির গাছ আছে বলে দাবি করলেও বর্তমানে তিনশ প্রজাতির গাছ রয়েছে।
জলবায়ু তহবিলের টাকায় করা উদ্যানের এমন হাল কেন, জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সরওয়ার আলম বাংলাদেশ টুডেকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি সরকারি গেজেটভুক্ত না হওয়ায় কোনো জনবল নিয়োগ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। যে কারণে উদ্যানটির এমন চেহারা।
এখন ২৫০ একর বনভূমি নিয়ে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডের আদলে রামুর এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে বলে জানান সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আগের ৬৫ একরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সংস্কার, উন্নয়নকাজসহ বিরল ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন ফুল ও ফলের চারা রোপণ করা হবে।
প্রতিষ্ঠার ১১ বছরের মাথায় পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে কক্সবাজারের একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই বিনোদনকেন্দ্রটি অযত্ন-অবহেলায় দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে। কমেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট, অর্থাভাব ও গার্ডেনে ঢুকতে টিকিট বেচার অনুমতি না থাকাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত থাকা কক্সবাজারে বিভিন্ন পর্যটন স্পট থাকলেও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য কোনও পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র নেই। সম্প্রতি বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেছে, গার্ডেনে বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের গাছের বদলে এখন জায়গা করে নিচ্ছে ঝোঁপ-জঙ্গল। চারদিকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বনবিভাগের কাটা গাছ। এসব কারণে পর্যটকসহ স্থানীয়রাও সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।
গেটের সামনে খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা ছিল চেরাই করা কাঠ। উদ্যানের ভেতরে ফুলের বাগানের কোনো চিহ্ন নেই। দর্শনার্থীদের বসার ঘর, কাঠের সাঁকো, হ্রদ, পানি সরবরাহের লাইন, কটেজ-বাংলো সবই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। উদ্যানের পশ্চিম পাশে (সড়কের কাছে) পাকা দেয়াল। তিন দিকের অংশের কাঁটাতারের যে বেড়া দেওয়া ছিল, তা–ও বহু জায়গায় ছিঁড়ে গেছে। নেই খুঁটিও। চোরের দল উদ্যানের ভেতরে ঢুকে গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে ।
পরিত্যক্ত উদ্যান দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন রামু বণিক সমিতির সভাপতি রহুল আমিন রকি বাংলাদেশ টুডেকে বলেন, জলবায়ু তহবিলের কয়েক কোটি টাকা খরচ করে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় অযত্ন–অবহেলায় উদ্যানটি ধ্বংস করা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলের বিপুল অঙ্কের টাকা জনগণের কোনো কাজে আসেনি।
এই রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা বন রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হক বাংলাদেশ টুডেকে বলেন, উদ্যানটি দেখভালের জন্য কমপক্ষে চারজন ফরেস্ট গার্ড ও চারজন বাগান মালি দরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদ্যানে একজন মালিও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের বিপরীতে এক টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেনটি সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়নি। বন বিভাগের নথিতেও বোটানিক্যাল গার্ডেনের অস্তিত্ব নেই।