ঢাকা
৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১১:৩৩
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪

ফকিরহাটে দুর্গাপূজায় প্রতিমা শিল্পীদের মনে আনন্দ নেই

মো: সাগর মল্লিক, ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: ফকিরহাটের কাঁঠালতলায় অরুল পাল পরম মমতা আর গভীর মনোযোগ দিয়ে দুর্গাপূজার বিগ্রহ তৈরী করছেন। কদিন পরেই (৯ অক্টোবর) শরতের শুভ্র সকালে ভক্তদের ঢাকের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠবে শারদীয় দুর্গোৎসব। ভক্তি আর ধর্মীয় বিশ্বাসকে মনে গেঁথে দেবী গড়ার কাজে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ফকিরহাটে আরো কয়েকজন প্রতিমা শিল্পী। প্রতিমা ভক্তানুরাগীদের আনন্দ দিতে পারলেও প্রতিমা কারিগর পালদের নিজেদের ঘরে আনন্দ নেই। প্রতিমা তৈরির সরঞ্জাম, মাটি, রং আর নিত্য পণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি তাঁদের পারিশ্রমিক। প্রতিমা শিল্পীদের বাজার দর অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে পারছেন না পূজা আয়োজকেরা।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাটের ফকিরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য ৬৯টি পূজা মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকগুলো মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এসব মণ্ডপে ব্যস্ত সময় পার করলেও মুখে হাসি নেই প্রতিমা শিল্পীদের।

পূজা আয়োজক কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফকিরহাটের অর্থনীতি মাছ ও কৃষি নির্ভর। এবছরের প্রথম দিকে তাপদাহ ও অনাবৃষ্টি এবং সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধধতায় মাছ ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। অভাব অনটনের মধ্যেও তাঁরা ধর্মীয় উৎসব পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। মন্দায় ফকিরহাটের প্রতিমা শিল্পীদের বাজার দর অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে পারছেন না পূজা আয়োজকেরা।

পূর্বপুরুষ থেকে বংশ পরম্পরায় সর্বশেষ চারটি পাল পরিবার ফকিরহাটে প্রতিমাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরির পেশায় টিকে আছেন। তার মধ্যে বিমল পালের পরিবারে তিনিই শেষ ব্যক্তি যিনি মাটির কাজ করেন। সন্তনেরা মাটির কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। প্রতিমাসহ মাটির কাজের পারিশ্রমিক কম ও অভাব অনাটনের কারণে তারা পেশা ছাড়ছেন।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান, একটি দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে সিংহ, অসুর, মহিষ, লক্ষী, গনেশ, সরস্বতী ও কার্তিক থাকেন। প্রতিমা গড়তে, মাটির প্রলেপ দিতে, রং করতে, চক্ষু দান ও অন্যান্য সাজ সজ্জার জন্য একটি মণ্ডপে শিল্পীদের কমপক্ষে ৫ বার যেতে হয়। এভাবে তিনজন লোক কাজ করে বেশ কয়েক দিনের চেষ্টায় প্রতিমা তৈরি করে মাত্র ১৭/১৮ হাজার টাকা মজুরি পান। তার প্রায় অর্ধেকের বেশি খরচ হয়ে যায় প্রতিমা তৈরির কাঁচামাল ও সরঞ্জাম কিনতে। এ বছর জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুন বেড়েছে বলে তারা জানান। এসব খরচ প্রতিমা কারিগরদের বহন করতে হয়।

ফকিরহাট পালপাড়া এলাকার প্রতিমা কারিগর অরুন পাল ও লিটন পাল জানান, গত বছর একটি দুর্গা প্রতিমা সেট (৮ সেট) তৈরির জন্য ৪ হাজার ৭০০ টাকার রং লাগত। এ বছর সে রঙের দাম প্রায় ৭ হাজার টাকা। এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ৭০০ টাকা, যা এই বছর এক জাহার টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়া খড়, বাঁশ, কাঠের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়েনি। সারা বছরে মাত্র দুই সেট প্রতিমা গড়তে অর্ডার নিয়েছেন তিনি। প্রতিসেট বিক্রি হবে ৩০ হাজার টাকায়। কিন্তু প্রতিমার পেছনে খরচ হয়ে যাবে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।

পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে নিজের উৎসব বিষাদে ভরে যাচ্ছে বলে জানান পাল পরিবারের প্রবীন সদস্য অরুন পাল। পূর্বপুরুষের পেশা আর ধর্মীয় অনুরাগের কারণে এ পেশায় পড়ে আছেন বলে তিনি জানান।

ফকিরহাট উপজেলা অফিসার (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন বলেন, এবারের দুর্গাপূজায় সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে কথা বলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রতিমা কারিগরদের এ পেশা টিকিয়ে রাখতে যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন তা নেওয়া হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram