শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজে যোগ দিয়েছে পোশাক শ্রমিকরা। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প এলাকায় বাড়ানো হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও টহল। তবে নানা কারণে আজও বন্ধ রয়েছে ২৫টির বেশি কারখানা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১০টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, পুকুরপাড়, নরসিংহপুর ও জামগড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব কারখানার সামনেই আইন-শৃঙ্খলা বানিহীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে সকালেই শান্তিপূর্ণভাবে প্রবেশের পর কাজ শুরু করেছেন অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা।
এদিকে শিল্প কারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, হামলা, কর্মবিরতিসহ চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ১৩টি কারখানা অনির্দিষ্টাকালের জন্য ছুটি এবং ১২টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তা ছাড়া কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বেশকিছু কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টাঙানো রয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো- জহরচান্দা এলাকার রাতুল গ্রুপ, আল্পস এপারেলস লিমিটেড, জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার তাহারাত ফ্যাশন, দূর্গাপুর এলাকার ফ্যাশন ডট কম লিমিটেড, বুড়িপাড়া এলাকার ইথিক্যাল গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার ডুকাটি এ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেলস লিমিটেড, এআর জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, জিহান গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, এআর ওয়েট প্রসেসিং লিমিটেড, ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড, এফজিএস ডেনিমওয়্যার লিমিটেড ও আঞ্জুমান গার্মেন্ট।
নোটিশে বলা হয়েছে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও সার্বিক আতঙ্কজনক অবস্থার কারণে কারখানা পরিচালনা করার অনুকুল পরিবেশ না থাকায় এবং কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের জান-মাল ও সার্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
এ দিকে ফ্যাশন হাউস, মিলিনিয়াম টেক্সটাইল, এভারব্রাইট সোয়েটার, নাঈম নীট, জিহান গ্রুপের জিহান গার্মেন্টস, আজমাত গ্রুপের আজমাত এ্যাপারেলস লিমিটেড, জেড-থ্রী কম্পোজিট নীটওয়্যার, জী-থ্রী ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, ছেইন এ্যাপারেল, কমফিট কম্পোজিট, এআর ওয়েট প্রসেসিং, জেনারেশন নেক্সট কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া জিরাবো এলাকার টেক্সটাউন গার্মেন্টসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার রাইজিং গ্রুপের এ্যাকটিভ কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহমুদ খালেদ বলেন, সকালে আমাদের কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছে। আমরা বিজিএমইএ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়ায় কোনো ধরনের অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পাশ্ববর্তী লুসাসা গ্রুপের কারখানাসহ অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের গেটে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকদেরকে ছেড়ে দিতে হয়।
কারখানাটিতে কাজ করা এক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করতে চাই বলেই কারখানায় আসি।
কিন্তু কারখানায় কাজের পরিবেশ না থাকলে মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিবে বলে শুনেছি। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কি করে খাব। আমরা চাই সরকার যেন এ বিষয়ে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এপিবিএনসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সেজন্য কঠোর নজরদারি ও টহল অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়ান যায়নি। তবে বেশকিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।