চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারন দেখিয়ে আউটডোরে মেডিকেল অফিসার না বসায় প্রতিদিন ২থেকে আড়াইশ দরিদ্র রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যে ৫জন চিকিৎসক রয়েছেন তারা মনগড়াভাবে রোস্টার বানিয়ে সপ্তাহে ১-২দিন অফিস করায় আউটডোরে রোস্টারভুক্ত চিকিৎসকের পরিবর্তে ভাড়াটে ডিএমএফ কোর্সের শিক্ষার্থীদের দিয়ে দায়সাড়াভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এটিকে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের হতদরিদ্র রোগীদের সাথে প্রতারণার সামিল বলে এলাকাবাসীর মন্তব্য।
জানা গেছে, ২০০৮সালে ৩১শয্যা বিশিষ্ট চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০শয্যায় উন্নিত করা হলেও সে অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষ। হাসপাতালটির অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৬টি। বর্তমানে কাগজে-কলমে ৮জন চিকিৎসক রয়েছেন। যার ১জন ডেপুটেশনে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ও ২জন রৌমারী হাসপাতালে থাকায় এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫জন চিকিৎসক। সিনিয়র ষ্টাফ নার্সের ৩৫টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩০জন। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ২টি পদের মধ্যে কর্তব্যরত রয়েছেন ১জন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৫টি পদের মধ্যে কর্তব্যরত আছেন ৩জন। ২৫জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১১জন। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট হিসাবে ফিজিওথেরাপি’র একটি পদ থাকলেও তা শুন্য রয়েছে, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও ফিজিওথেরাপি না থাকায় সে সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ রোগীরা। এক্স-রে টেকনিশিয়ানের(রেডিওগ্রাফার) ১টি পদ, সেটি শুন্য থাকায় ফার্মাসিষ্টকে দিয়ে এক্স-রে মেশিন চালানো হচ্ছে। ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট পদটি শুন্য রয়েছে। সেনেটারী ইন্সপেক্টরের একমাত্র পদটিও শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৭টি পদের মধ্যে ১জন কর্মরত রয়েছেন। অফিসে প্রধান সহকারীর পদটিও শুন্য রয়েছে। এম্বুলেন্সের ড্রাইভার না থাকায় এম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারন মানুষ। ষ্টোর কিপারের পদটি শুন্য থাকায় একজন অফিস সহায়ককে দিয়ে চালানো হচ্ছে ষ্টোর সংরক্ষণের কাজ। টিকেট ক্লার্কের একটি পদ তাও শুন্য রয়েছে। ২জন সিকিউরিটি গার্ডের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করছে। ওয়ার্ড বয়ের ৩টি পদের মধ্যে কর্মরত আছে ১জন।বাবুর্চী ৩জনের মধ্যে ১জন কর্মরত। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৫টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ২জন। আয়ার ৩পদের মধ্যে কাগজে-কলমে ১জন থাকলেও রহিমা বেগম নামের ওই আয়া ডেপুটেশন নিয়ে কুড়িগ্রামে থাকায় বর্তমানে কোন আয়া নেই।
বর্তমানে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন ডা.মো.আমিনুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.রবিউল ইসলামকে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়ায় তিনি রংপুর থেকে এসে প্রতি ১৫দিনে ৩দিন ডিউটি করেন। জুনিয়র কনসালটেন্ড শিশু ডা.পুলক কুমার সরকার কুড়িগ্রাম থেকে এসে সপ্তাহে দুদিন রোগী দেখেন। চলতি বছরের ৩এপ্রিল ডা.মাইনুল ইসলাম যোগদান করে ওই দিনই ডেপুটেশনে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চলে যান। অপর দুইজন ডা.আবু শাহরিয়ার ও ডা.সাহাদত হোসেন শিমুল ডেপুটেশনে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে থাকা ডা.আবু রায়হান ২মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে থাকায় ওই দায়িত্ব পালন করছেন ডা.সুমাইয়া সাবরিন। এবং মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন ডা.লাকি বেগম। আর কোন চিকিৎসক সেখানে কর্মরত নেই। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকরা মনগড়াভাবে রোস্টার বানিয়ে সপ্তাহে ১-২দিন ডিউটি করায় আউটডোরে কোন মেডিকেল অফিসার বসছেন না। ফলে প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা ২থেকে আড়াইশ রোগীর চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানে রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরিবর্তে ভাড়াটে ডিএমএফ কোর্সের শিক্ষার্থীকে দিয়ে দায়সাড়াভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ বলে রোগীরা জানায়। এতে সুস্থ না হয়ে বরং রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত বলে সচেতন মহলের দাবী।
সরেজমিনে রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরে(বহিঃবিভাগ)শতাধিক নারী চিকিৎসা সেবা নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছেন। স্থানীয় ডিএমএফ এর ছাত্র নাজমুল, চন্দন ও দিপা লাইনে দাড়িয়ে থাকা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। এসময় তাদের পাশে ঔধষ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভদের ঘোরা ফেরা করতে দেখা যায়। নাম না বলার শর্তে অনেকে জানান, ডিএমএফ’র ওই ছাত্ররা হাসপাতালে বসে রোগী দেখার কোন যোগ্যতা রাখে না। তারা ঔষধ কোম্পানীর স্যাম্পল এবং হাসপাতাল থেকে নামে-বেনামে ঔষধ তুলে নিতে আউটডোরে বসে।
আউটডোর ইনচার্জ ও ফর্মাসিষ্ট প্রনব কুমার ঘোষ জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহের জন্য ষ্টোর থেকে প্রায় ৫০হাজার পিছ ট্যাবলেট তুলে নিয়ে সপ্তাহের ৬দিন সমানভাবে বিতরণের চেষ্টা করেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঔষধ সীমিত পরিমানে পাওয়া যায়। তবে শনি ও রোববার রোগীর চাপ তুলনামূলক বেশী হওয়ায় ওই দুইদিন ঔষধ বেশী যায়।
ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.সুমাইয়া সাবরিন বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারনে আউটডোরে ডিএমএফদের বসানো হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.মো.আমিনুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক সংকট। আউটডোর চালাতে হবে, তাই ওদের দিয়ে ডিউটি করানো হচ্ছে।