ঢাকা
১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:০৬
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০২৪

চার বেলা খাবারে রোগীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা!

আজ ১০ অক্টোবর। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসার সুবিধা থাকলেও রোগীর স্বজনেরা সাধারণত বেছে নেন পাবনা মানসিক হাসপাতালকে। কারণ এই হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে স্বজনদের থাকতে হয় না। অথচ অন্য হাসপাতালে থাকাটা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া বিনা মূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা পাওয়া যায়। পাবনা শহরের হেমায়েতপুরে অবস্থিত ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে সেবার মান খারাপ না। হাসপাতালের প্রতি মানুষের একধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। তবে ৬৭ বছরের পুরোনো এই হাসপাতাল এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।

হাসপাতালের মোট ১৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি পুরুষ ও পাঁচটি নারী ওয়ার্ড। মোট শয্যার ৩৫০টি বিনা মূল্যের এবং ১৫০টির জন্য রোগীকে (পেয়িং) ভাড়া দিতে হয়। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে মোট ৫৩টি ভবন রয়েছে। রোগীদের প্রতিটি ওয়ার্ডে গান শুনতে সাউন্ড সিস্টেম রয়েছে, আছে টিভি দেখার সুযোগ। নজরদারির জন্য হাসপাতালের চারপাশে শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো রয়েছে। লোডশেডিং হলে আলোর ব্যবস্থা রাখতে ৪৮টি সোলার বাতি স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে হাসপাতালে এক জন পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক, আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মিলে চার জন আছেন। আছেন সাত মেডিক্যাল অফিসারের মধ্যে ছয় জন। তবে সিনিয়র কলসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট, ডেন্টাল সার্জন, অ্যানেসথেসিস্ট, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ও বায়োকেমিস্ট পদে এক জনও নেই। সহকারী অকুপেশনাল থেরাপিস্টের ৯ জনের মধ্যে চার জন, ৭০ জন ওয়ার্ড বয়ের মধ্যে ২৬ জন আছেন। স্টাফ নার্সের প্রয়োজনের তুলনায় কম। বর্তমানে চিকিৎসক পদে ১৯টি, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে ৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদে দুইটি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সহকারী নার্স বাদে ২৭টি পদ এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ১০৯টি পদ শূন্য। সব মিলিয়ে ৬৪৩ পদের মধ্যে শূন্য আছে ১৭৭টি।

অনেক রোগী আসেন, যাদের নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু এখানে ঠিকমতো কাউন্সেলিং হয় না। সাধারণত এক মাসেই রোগীকে রিলিজ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মাসের হিসাবে এখানে কেবিন ভাড়া ৯ হাজার ৭৫০ টাকা, অথচ খাবার নিম্নমানের। একমাত্র সিনেমা হলটি দীর্ঘদিন বন্ধ।

খাবারের মান নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। কিছুদিন আগে টেন্ডার জটিলতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাবার সরবরাহ। পরে সে সংকট কাটিয়ে উঠলেও মান বাড়েনি খাবারের। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন চার বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এখানকার নিম্নমানের খাবার গ্রহণে বাধ্য হন রোগীরা। এখানে বাইরে থেকে খাবার আনার ব্যবস্থা নেই। ক্যানটিন নেই। ফলে রোগীরা চাইলেও নিজের টাকায় খাবার কিনতে পারেন না।

হাসপাতালের প্রধান ফটক পার হওয়ার পর ডান দিকে রোগী ভর্তির কার্যক্রমের জন্য রয়েছে বহির্বিভাগ। এখানে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী দেখা হয়। বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। নার্সদের আন্তরিক সেবা রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে সেখানে রয়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে যেমন পারেন টাকা নেন। এর সঙ্গে আনসার সদস্যরাও যুক্ত রয়েছেন এমন অভিযোগ মিলেছে।

চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এখানে বিনা মূল্যে আধুনিক ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করা হয়। এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের মতো রোগী ভর্তি থেকে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগের লক্ষণমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা এক থেকে দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার রোগ বারবার দেখা দেয় এবং রোগী ফিরে এলে আবার ভর্তি নেওয়া হয়।

জনবলসংকটের কারণে বিদ্যমান সেবার মান পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের বৃত্তিমূলক বিভাগ, রেডিওলজি সেবা তেমন চালু নেই। এখানে তেমন কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি দেওয়া হয় না। নেই শিশুদের চিকিৎসার জন্য ইনডোর সুবিধা। আবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম সমস্যা নিয়ে আসা শিশুদের জন্য নেই অকুপেশনাল থেরাপি বা স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা।

পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী বললেন, পাবনার মানসিক হাসপাতালের ওপর মানুষের আস্থা অনেক। এখানে সেবার মানও ভালো; কিন্তু চিকিত্সকসহ জনবলসংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দসহ নানা সমস্যা রয়েছে এখানে। হাসপাতালের চেয়ে এটি অনেকটা বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারকে নজর দিতে হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, এখানে অনেক পদই দীর্ঘদিন ধরে পূরণ হয় না, আমরা সেগুলো পূরণের চেষ্টা করছি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। খাবারের যে সংকট ছিল তা কেটে গেছে। রোগী ভর্তির বিষয়ে দালালের সঙ্গে আমাদের হাসপাতালের কেউ জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram