সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে ৩ সন্তানের জনক দিনমজুর দিলোয়ার হোসেন (৩৭) নামে এক যুবক খুন হয়েছেন। নিহত যুবক উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের কামরুপদলং গ্রামের নিম্বর আলীর ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহতের কোন বসত বাড়ী না থাকায় কামরুপদলং গ্রামের মস্তাই মিয়ার বাংলো বাড়ীতে ৩ ছেলে সন্তান নিয়ে থাকতেন এবং দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। শুক্রবার প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। রাতের কোন এক সময়ে অজ্ঞাতনামা কে বা কারা দিলোয়ারের মাথায় কয়েকটি চুরিকাঘাত করে বিছানা থেকে মেঝেতে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর চলে যায়। শনিবার সকাল ৭ টায় পান্তা ভাত নিয়ে তার সাবেক স্ত্রী ঘরে ঢুকে দেখেন লাশ হয়ে মাটিতে দিলোয়ারের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। এই সময় দিলোয়ারের সাবেক স্ত্রী চিৎকার দিলে পার্শবর্তী লোকজন জড়ো হয়ে লাশ দেখতে পেয়ে শান্তিগঞ্জ থানায় খবর দেন। থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন।
পরিবারিক সূত্রে আরও জানা যায়, নিহত দিলোয়ার হোসেন বিগত ১৫ বছর পূর্বে সুনামগঞ্জ সদর থানার আফতানগর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের রশিদ আলীর মেয়ে তারাবানুকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের ঔরসে দুই মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। তিন সন্তানের জন্মের পর তারাবানু পরকীয়ায় আসক্ত হন উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মাধব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিগত ৫ বছর পূর্বে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যান তারাবানু। ৫ বছর পর বিগত ৭ অক্টোবর তারাবানু পুনরায় চলে আসেন সাবেক স্বামী নিহত দিলোয়ারের বাড়ীতে। সামাজিকভাবে ২য় বার ১৩ অক্টোবর সাবেক স্বামীকে বিয়ে করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এই খবর পেয়ে প্রেমিক সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর দুই দিন আগে কামরুপদলং গ্রামে এসে তারাবানুর কাছে তার রেখে দেওয়া মোবাইল ফোনের সিম নিতে চান। কিন্তু ইতিমধ্যে দিলোয়ার হোসেন উক্ত সিমটি ভেঙ্গে ফেলেছেন বলে তারাবানু তাকে জানিয়ে দেন। পরিবারের এবং গ্রামের অনেকেরই ধারণা তারাবানু পুনরায় সাবেক স্বামীর কাছে চলে আসার জের ধরেই সহ্য করতে না পেরে তার প্রেমিক রাগে ক্ষোভে এই নির্মম খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এই মর্মান্তিক খুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মো: ফারুক আহমদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আনছার উদ্দিন। বিএনপির এই দুই সিনিয়র নেতা সহ এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের লোকজন আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন দ্রুত প্রকৃত খুনীদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আক্রাম আলী জানান, খবর পেয়ে আমি সহ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত খুনীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।