সাগর মল্লিক, ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ফকিরহাটে ব্যাপক হারে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ফলনে এই সফলতা বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন।
ফকিরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর ৫১৫ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৮০ জন চাষি বারী হাইব্রিড টমেটো-৮ নামে উন্নত জাতের টমেটো চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। স্বল্প খরচে মাত্র দুই মাসের মধ্যে আশানুরূপ ফলন পেয়ে উচ্ছ্বাসিত চাষিরা।
উপজেলার বেতাগা এলাকার টমেটো চাষি মো. মাহমুদ শেখ জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন। ৫০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে প্রতি কেজি একশত টাকা দরে তিনি প্রায় এক লক্ষ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। সামনে আরো লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তার এ টমেটো চাষে কৃষি বিভাগ নগদ অর্থ, বীজ, সার ও লজিস্টিক সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।
একই এলাকার আরেক টমেটো চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, খেতের জমিতে শেড দিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচের তিনগুণ লাভের আশা করছেন তিনি। আশপাশের কৃষকেরাও টমেটো খেতে এসে চাষের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
বেতাগা ইউনিয়নের টমেটো চাষি মোসলেম গাজী বলেন, ‘টমেটো চাষে মাকড়ের আক্রমণ হলে তাঁরা কীটনাশকের বদলে পরিবেশবান্ধব ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ও নীল আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করেন। ফলে ক্রেতারা নিরাপদ সবজি হিসেবে আগ্রহ নিয়ে এই টমেটো কেনেন। মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষয়-ক্ষতি হলেও ভালো দাম পাওয়ায় সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে বলে তিনি জানান।’
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের প্রসারে চাষিদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বেতাগার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মণ্ডল। গ্রীষ্মকালীন হলেও প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এসএসিপি প্রকল্পের অধীনে ফকিরহাটের সবগুলো ইউনিয়নে গ্রীষ্মকালীন বারী টমেটো-৮ চাষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ক্রস ভিজিট, লজিস্টিক সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধকরণ করা হয়েছিল। ফলন আশানুরূপ হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে ফসলটি আরও ব্যাপকভাবে চাষের জন্য কৃষি অফিস কাজ করছে বলে তিনি জানান।