গণআন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই নগরীর আখালিয়ায় ও ৪ আগস্ট কোর্ট পয়েন্টে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ছাত্র-জনতার উপর। এসময় প্রদর্শিত অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখে হতবাক হয়ে যান সিলেটের মানুষ।
অভিযোগ উঠেছে, প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে এম-১৬ রাইফেলও ছিল। শুধু সিলেট নয়, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় হামলা। সেদিন গুলিতে দু’জন নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন। এসব ঘটনায় সিলেট ও হবিগঞ্জে অস্ত্রধারী ২৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ঘটনায় সিলেটের অস্ত্রধারী ১২ জন এবং হবিগঞ্জের ১২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রদর্শিত এম-১৬ রাইফেলটি সেই সময়কার সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা শিবলু আহমদের হাতে দেখা গেছে।
এর আগে গত ১৮ জুলাই নগরের আখালিয়া এলাকায় পুলিশের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এসময় প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়েন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। পরবর্তীতে ৪ আগস্ট সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র-জনতা অবস্থান নিলে তাদেরকে হটাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন। তারা অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এছাড়াও আন্দোলন চলাকালে যাদেরকে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ছিলেন- সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পিযুষ কান্তি দে, মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হান্নান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, মেজরটিলার ছাত্রলীগ ক্যাডার আনসার আহমদ ওরফে শুটার আনসার, ছাত্রলীগ ক্যাডার হাসান আহমদ, ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী বাবুল আহমদ পাঙ্গাস, মুনিম আহমদ।
এদিকে গত ৪ আগস্ট হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আবু জাহিরের নেতৃত্বে অন্তত ১২ জন অস্ত্রধারী। সেদিন অস্ত্রধারীদের গুলিতে দু’জন নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।
জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের ১২টি জেলায় যে ১২৬ জন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা গেছে, তার মধ্যে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ১০ জন অস্ত্রধারীর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। ফেনীতে শনাক্ত হওয়া ৩৩ জন অস্ত্রধারীর মধ্যে একজনকে, কেরানীগঞ্জে ৪ জনের মধ্যে একজনকে এবং সিরাজগঞ্জে ২ জনের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ১৮ জুলাই ও ৪ আগস্ট প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। সিলেটে অস্ত্রধারী কাউকে এখনও গ্রেফতার যায়নি। ৪ আগস্টের পর কেউ ভারতে পালিয়েছে বা কেউ দেশের অন্য জেলায় লুকিয়ে আছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে কাজ করছি। যেকোনও সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। একই সাথে অস্ত্রধারীদের অবস্থান কারও জানা থাকলে পুলিশকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হচ্ছে।