কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের নদীবেষ্ঠিত উপজেলা কাজিপুরের চরাঞ্চলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবটি ১২ বছর যাবৎ ঝুলে রয়েছে। উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় কর্মকর্তাদের টেবিল ঘুরে তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের ফাইলটির সর্বশেষ অবস্থান পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) নিকট। এদিকে দুর্গম চরাঞ্চল এবং উপজেলা সদর থেকে ৩৮ কিমিঃ দূরে হওয়ায় চরাঞ্চলে দিন দিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে চর দখল নিয়ে বেশ কয়েকবার খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সব সময় একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের সদিচ্ছায় কাজিপুরের চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনে লক্ষ্যে গত ২২ আগস্ট ২০১৩ সালে জেলা সভায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার আইন শৃংখলা কমিটির সভায় চরাঞ্চলে মাদক, জুয়া, অপহরণ, চুরি, ডাকাতিরোধে কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর ও মনসুরনগর ইউনিয়ন নিয়ে মনসুরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরপর একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কাজিপুর থানার চারটি ইউনিয়নের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মনসুর নগরের কুমারিয়া বাড়িতে মনসুরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
এরপর সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বিষয়টির সরেজমিন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে নিয়মানুযায়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয় জমির দলিল সম্পাদিত হয়। জেলা প্রশাসক তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে রাজশাহী ডিআইজি বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। পত্রে তিনি তদন্ত কেন্দ্র গঠনের যাবতীয় শর্ত পুরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। ডিআইজি রাজশাহী তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশসহ পত্র প্রেরণ করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে। একই বছরের ১২ নভেম্বর মহাপুলিশ পরিদর্শক বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স ঢাকা বরাবর তদন্তকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার নানা দিক তুলে ধরে পত্র প্রেরণ করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার।
পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, কাজিপুর সদর থানা হতে প্রস্তাবিত মনসুরনগর তদন্ত কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিমিঃ। বর্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে নৌকা, ভ্যান ও পায়ে হাঁটা ছাড়া ওই এলাকায় যাবার কোন পথ নেই। ফলে আইন শৃংখলা রক্ষা বা অপরাধ দমন কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এমতাবস্থায় নিরীহ জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন ও আইন শৃংখলা রক্ষার্থে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব সুপারিশসহ প্রেরণ করা হলো। এরপর কেটে গেছে এক যুগ। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই।
কাজিপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক অধ্যক্ষ বকুল সরকার জানান, চরাঞ্চলের আইন শৃংখলা রক্ষায় এই পদক্ষেপের বাস্তবায়ন জরুরি। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তদন্ত কেন্দ্রটি দরকার।