সাভারে গ্যাস সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকরা। দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস সঞ্চালনে থাকে টালমাটাল অবস্থা। এতে করে আবাসিক গ্রাহকদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ থাকছে বন্ধ। আর শিল্প গ্রাহকদের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন।
বারবার তিতাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। যদিও তিতাস কর্তৃপক্ষের দাবি, জাতীয় পর্যায় থেকে গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় এ অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস বিতরণ করা যাচ্ছে না।
তিতাসের আশুলিয়া জোনাল অফিসের তথ্য বলছে, আবিবি-সাভারে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকের মাসিক চাহিদাকৃত লোড ১,৪৪,১৬,২২৪.৭৫ ঘনমিটার আর শিল্পে মাসিক চাহিদাকৃত লোড ২,৪৯,০৯,৯৭৫.৯৭ ঘনমিটার। যার প্রেক্ষিতে আবিবি-সাভারে বর্তমানে মিলছে চাহিদাকৃত গ্যাসের আনুমানিক ৫০ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে সাভার পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস-সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস পাচ্ছেন না অধিকাংশ গ্রাহক। কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসবিহীন সারাদিন এবং সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও গ্যাস আসে রাত ১১টা নাগাদ। আবার কোনো কোনো এলাকায় রাত ১২টা বাজলেও লাইনে গ্যাসের চাপ থাকে না।
এমন সমস্যায় দিনের পর দিন বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ ঘর-গৃহস্থালির কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। নিরূপায় হয়ে অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস, বৈদ্যুতিক চুলা ও মাটির তৈরি চুলায় রান্নার কাজ সারছেন।
সাভারে রেডিও কলোনি মহল্লার বাসিন্দা আওলাদ হোসেন জানান, বাসাবাড়িতে সারাদিনে দুই ঘণ্টাও ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। আর গ্যাসের চাপ এতটাই কম থাকে যে পানিও গরম করা যায় না। অথচ আমাদের নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আশুলিয়ার কোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, বাড়িতে বৈধ গ্যাস নিয়ে বিপাকে পড়েছি। প্রতিমাসে গুণতে হচ্ছে গ্যাসের বিল। বিনিময়ে সেবার খাতা শূন্য। বন্ধের দিন ছাড়া গ্যাস থাকে কালেভদ্রে। দুঃখের শেষ নেই।
এদিকে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার শিল্প কারখানাগুলো ধুঁকছে গ্যাস সংকটে। যতদিন যাচ্ছে ততোই তীব্র আকার ধারণ করছে। এ অঞ্চলের শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। প্রয়োজনের অর্ধেক গ্যাসও পাচ্ছে না অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় পোশাক শিল্প ও কলকারখানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই গ্যাসের চাপ থাকছে না।
বিভিন্ন শিল্প কারখানার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গ্যাস সংকটে সাভার-আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কারখানাগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আগে ঘণ্টায় যে উৎপাদন হতো এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে সময়মতো পণ্য শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে তীব্র গ্যাস সংকটের ফলে শিল্পাঞ্চলের ছোটখাটো পোশাক কারখানার মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে শিল্প কারখানার মালিকরাও দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। কারণ অধিকাংশ পোশাক কারখানার মালিকরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কিছু কারখানা চললেও অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
ভারের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সালেহ খাদেম উদ্দিন জানান, জাতীয় পর্যায় থেকে গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় কলকারখানা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস বিতরণ করা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যে পার্থক্য তার জন্যই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আমরা যে পরিমাণ গ্যাস পাই, তা মোটামুটি সমানভাবে সরবরাহের চেষ্টা করছি।