শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর সৌন্দর্য একেকরকম। ষড়ঋতুর এই বাংলায় যে দুটি ঋতু নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে তা হলো শরৎ ও বসন্ত। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য নিয়ে উপমার হেরফের খুবই সামান্য হলেও ভালো লাগার ব্যাপারগুলো নিতান্তই আপেক্ষিক। তবে শরতের কাশফুলের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার মায়ায় জড়ায়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। গত দু'বছর ধরে বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চল গন্ডামারা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ মাঠে কাশফুল জায়গা করে নিয়েছে আপন সৌন্দর্যে। প্রতিদিনিই এখানে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণে মুখরিত হয়। শরতে সাদা কাশফুলের দোলা যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে এখানে। কপোত-কপোতি, প্রিয়জন ও পারিবারিক ভ্রমণের অন্যতমত স্পটে রুপ নিয়েছে গন্ডামারা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাশফুলের বিশাল মাঠটি। কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধতা খুঁজছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন। বেলা গড়ালেই লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে উঠছে উপজেলার গন্ডামারা এলাকার জলকদরের পাশে বিস্তীর্ণ এই এলাকাটি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়কের শীলকূপ টাইমবাজার হতে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে ইউনিয়নের সীমান্ত ব্রীজ পার হলেই গন্ডামারা ইউনিয়ন। পূর্বে জলকদরের খাল আর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। দু'টোর মধ্যবর্তী এ উপকূলীয় অঞ্চল গন্ডামারার অবস্থান। এখানেই জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত ১৩২০ মেগাওয়াট এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি (কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প) অবস্থিত। একসময় এখানেই লবণের মাঠ আর মাছের ঘের ছিল। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীগ্রহণে এখানে মাটি ভরাট করে। এখানের বিশাল একটি অংশ জুড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ। ভরাটকৃত নতুন বালি-মাটিতেই ছেয়েগেছে শরতের কাশফুল। কাশফুলের শুভ্রতা খুঁজতে সেখানে বসে কেউ গল্প করছেন, মেতে উঠেছেন আড্ডায়। কেউ বা আবার কাশফুলের সঙ্গে তুলছেন সেলফি ও ছবি। সবমিলিয়ে এটি এখন বিনোদনের একটি স্পটে রুপ নিয়েছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে শুক্রবার ও শনিবারে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পারিবারিক ভ্রমণ দেখার মতো।
কবি ও কথাসাহিত্যিক জসিম উদ্দিন মনছুরি বলেন, 'সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা। পাহাড় সাগর নদীবেষ্টিত জনপদের সৌন্দর্য অতুলনীয়। আমি বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। প্রকৃতির টানে ছুটে চলি গন্ডামারার কাশফুল বাগানে। এখানেই আমার জন্মস্থান। এখানে কি অনিন্দ্য সুন্দররূপে সাজিয়েছে বিধাতা। প্রকৃতিকে যারা পছন্দ করেন তারা এই সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরাতে পারবেন না। সারি সারি বাগানে কাশফুল ফুটে হেমন্তের সৌন্দর্যকে অপরূপ করে সাজানো হয়েছে। কাশফুলের সৌন্দর্য দেখেই বিমোহিত হলাম আবেক আপ্লুত হলাম। প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা দেখে হাজার বছরের জমানো আবেগ প্রকৃতিতেই নিমগ্ন করলাম। কাশফুলের বাগান নয় যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কাশফুলের খেলা দেখতে প্রতিনিয়ত নানা বয়সের প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসছেন এখানে।'
কাশফুল দেখতে আসা সীমা সুশীল নামে একজন বলেন, ‘গন্ডামারা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কাশফুলের বিশাল মাঠ প্রথম দেখায় যে কাউকে প্রেমে ফেলবে। এ এলাকায় এতো কাশফুল হয়তো আগে কেউ দেখেনি। মাঠজুড়ে কাশফুলের সাদার শুভ্রতায় যে কারো মন হারিয়ে যাবে অজানায়। স্থানীয়ভাবে বিনোদনের কোনো স্পট না থাকায় এখানে শরৎকালে কাশফুলই ভরসা। সুন্দর একটি বিকেলের জন্য প্রায়ই এখানে ছুটে আসি দলবলে।'
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, বাংলাদেশের ঋতুভিত্তিক জনপ্রিয় ফুলের মধ্যে কাশফুল অন্যতম। বাংলাদেশের সব নদ-নদীর তীরে প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধারে বেশি কাশফুল জন্মে।কাশফুল দিয়ে আগের মানুষ ঘর-তৈরি করত। এখন পানের বরে ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এ কাশফুল। সেই সঙ্গে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।ঔষধিগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিকভাবে অযত্নে-অবহেলায় ফু্টলেও সৌন্দর্য পিপাশু মানুষের কাছে খুবই প্রিয় এ ফুল। সম্প্রতি গন্ডামারার চরাঞ্চলে শরতের কাশফুল দর্শনার্থীদের বিনোদন স্পটে রুপ নিয়েছে।