শিবব্রত চক্রবর্ত্তী, পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি: পরশুরাম বাজারে প্রতিদিন ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ছে মানুষ। যানজটের নগরী বললেই রাজধানী ঢাকার নাম আসে প্রথম ভাবনাতেই। কিন্তু এই পরশুরাম বাজারের বাসিন্দাসহ পথচারীদেরও প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হচ্ছে অসহনীয় এই যানজট। পরশুরাম বাজারে সকাল থেকেই শুরু হয় যানজট। সেই যানজট চলমান থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। তীব্র যানজটে নাকাল পথচারী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিত্যসঙ্গী হয়ে যাওয়া যানজটের নেপথ্যে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। দিন দিন এই শহরে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজির জট। এ ছাড়া সড়কে বড় যানবাহন রেখে মালামাল খালাসও যানজটের অন্যতম কারণ। এর ফলে জরুরি সেবার গাড়িগুলোও ঠিকমতো সড়কে চলাচল করতে পারছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ ও সড়ক বিভাগ অবশ্য বলছে, যানজট নিরসনে চার লেনের রাস্তা নির্মাণসহ নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পরশুরাম পৌরসভার তথ্য বলছে, বাজারের আয়তন ২২দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে ইজিবাইকের লাইসেন্স দিতে শুরু করে পৌরসভা। এরই মধ্যে ছোট এই বাজারে চলাচলের জন্য লাইসেন্স পেয়েছে প্রায় বিশ হাজার ইজিবাইক। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় ১০ হাজার। অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যাও ১০ হাজারের কম নয়।
পরশুরাম বাজারের প্রধান সড়কের সুবারবাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে হাসপাতাল মোড় বাসস্ট্যান্ড, পরশুরাম প্রাথমিক স্কুলের সামনে, সোনালী ব্যাংক মোড়, নতুন স্টেশন রোডের মাথা, পোষ্ট অফিস রোড ,বাশপদুয়া রোড, গুড় দোকান সংলগ্ন, গোস্ত দোকান সংলগ্ন, উত্তর বাজার হাঁসমুরগির বাজারের মোড়, কাউতলী রোড ও উত্তর বাজার ব্রীজের দক্ষিণ ও উত্তর অংশ সহ পরশুরাম বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া বাজারের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে স্থায়ী দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে রাখেন ভ্রাম্যমাণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। স্থায়ী দোকানিরাও তাদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে মালামাল রাখেন। সড়কে যানজট ও ফুটপাত দখল-দুইয়ে মিলে বাজারের পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফকির মিঞা বলেন, পরশুরাম বাজারে যানজট বেড়েই চলেছে। বাজারের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার সমাগম বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে যানবাহন। এ পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পৌর পরিকল্পনা উন্নত না করতে পারলে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
পরশুরাম বাজারের ব্যবসায়ী শাহজাহান ও অখিল চন্দ্র সাহা দুজনই ব্যবসায়ী। তারা জানান, মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অনেক সময় দোকানগুলোর সামনেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। এগুলোর কারণেও যানজট বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইজিবাইকের চালকেরা তাদের গাড়ি রাখার জায়গা না থাকার কথা তুলে ধরছেন। ইজিবাইক চালক শাহীন, সিরাজ ও মহিম সহ অনেকেই বলেন, ‘পরশুরাম বাজারে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। তাহলে আমরা কোথায় গাড়ি দাঁড় করাব?’
অতিরিক্ত যানবাহনকে যানজটের প্রধান কারণ উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, প্রধান সড়ক ছোট। কিন্তু যানবাহন অনেক বেশি। অব্যবস্থাপনাও রয়েছে। ফলে শহরে যানজট লেগেই থাকে।
জানতে চাইলে পরশুরাম পৌরসভার এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, "শহরে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কঠোর ব্যবস্থা নিলেই কয়েক দিন ঠিক থাকে তারপর আগের অবস্থায় ফিরে যায়। "ওই সূত্র জানায়, "নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চার লেনের রাস্তা করার পরিকল্পনা হচ্ছে।"
পরশুরাম উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শাহ আলম ভুঁইয়া বলেন, "পরশুরাম বাজারের যানজট নিরসনে চার লেনের সড়ক তৈরির প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিক করন করা হয়েছে। সড়ক কাঠামোর প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চার লেনের এই সড়ক বাস্তবায়ন হলে সমস্যা দূর হবে।"
এলাকাবাসীরা বলেন, এই যানজটের কারণে পরশুরাম বাজারে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেক সময় জরুরি অবস্থার রোগীদের সময় মত হাসপাতালে নেয়া যায়না। ছাত্র-ছাত্রীরা সময়মত স্কুলে পৌঁছাতে পারেনা। তারা বলেন, এই তীব্র যানজট সমস্যা চলমান থাকলে বিশেষ করে জরুরি অবস্থার রোগীদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই পরশুরাম বাজারের যানজট নিরসন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অবিলম্বে পরশুরাম বাজারে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা চালু করার জন্য দাবী জানাচ্ছে পরশুরামের সর্বস্তরের এলাকাবাসী।